ঘরের ভেতর মহিরুহ; পর্ব-৪

ঘরের ভেতর  মহিরুহ; পর্ব-৪

ঘরের ভেতর  মহিরুহ; পর্ব-৪; বনসাইয়ের গাছ সংগ্রহ- ডাঃ পার্থপ্রতিম; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
বনসাই করার জন্য বিভিন্নভাবে গাছ সংগ্রহ করা যায়। নার্সারি থেকে গাছের চারা কিনে, বাগান থেকে, পোড়ো বাড়ির দেওয়ালে, আনাচে-কানাচেতে গজিয়ে ওঠা গাছ দিয়েও বনসাই শুরু করা যেতে পারে। বীজ পুঁতেও চারা বানিয়ে নেওয়া যায়। গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে ঠিকমতো যত্ন করলে তা থেকে নতুন গাছ তৈরি হয়। এছাড়াও গুটি কলম, দাবা কলম, চোখ কলমের সাহায্যে নতুন গাছ তৈরি করা যেতে পারে। নার্সারিতে বিভিন্ন ধরনের গাছ টবে বা পলিথিন প্যাকেটে বিক্রি হয়। গাছ কেনার সময় সবার আগে নজর দিতে হবে গাছের প্রজাতির দিকে। অর্থাৎ এমন গাছই কিনতে হবে যে গাছ দিয়ে সুন্দর বনসাই করা সম্ভব। তারপর দেখে নিতে হবে গাছের ডালপালার বিন্যাস ঠিকমতো আছে কিনা। শহরাঞ্চলে এখন অনেক নার্সারিতে বনসাই করার জন্য আলাদাভাবে গাছ পাওয়া যায়। এগুলি হল কয়েক বছর ধরে বনসাই-এর জন্য পরিচর্যা করা গাছ। সহজভাবে বলা যায় এগুলি হাফ ডান বনসাই বা প্রি-বনসাই। যারা বনসাই চর্চার হাতেখড়ি দিতে চলছেন তাদের জন্য আধা বনসাই বেশ সুবিধাজনক। নার্সারি থেকে গাছ কেনার সময় বীজের তৈরি গাছ না কিনে গুটি কলম বা দাবা কলমের গাছ কেনা উচিত। কারণ বীজের তৈরি চারা থেকে বনসাই করতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লাগে।

আমাদের চারপাশের বাগানে, জঙ্গলে, অকেজো ড্রেনে, পরিত্যক্ত বাড়ির দেওয়ালে, রেল লাইনের ধারেকাছে অনেক গাছ নিজে থেকেই গজিয়ে ওঠে। এইভাবে অযত্নে বেঁচে থাকা গাছগুলি দিয়ে আকর্ষণীয় বনসাই তৈরি করা যায়। বিশেষত যেসব গাছ অল্প জল ও মাটিতে দীর্ঘদিন বেঁচে রয়েছে বনসাইয়ের জন্য তারা সবচেয়ে উপযুক্ত। রেল লাইন বা রাস্তার ধারে গজিয়ে ওঠা গাছগুলি গোরু-ছাগল প্রায়ই মুড়িয়ে খেয়ে ফেলে। এ ধরনের বয়স্ক গাছ তুলে এনেও বনসাই করা যায়। তবে গাছ সংগ্রহের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে কোনো অবস্থাতেই গাছটিকে টেনে তোলা যাবে না। সব সময়েই মাটি খুঁড়ে শেকড়ের চারপাশে গর্ত করে মাটি সমেত গাছটিকে ওঠানো উচিত। প্রথমক্ষেত্রে গাছটি তোলার পর তাকে মাপমতো টবে লাগিয়ে দু-তিন সপ্তাহ ঠান্ডা জায়গায় রেখে দিতে হবে। এসময় নিয়মিত জল দেওয়া দরকার। তারপর গাছটি তরতাজা হলে তাকে দিয়ে বনসাই তৈরির চেষ্টা করা যেতে পারে। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে বর্ষার আগে বা শীতের শেষে চারা সংগ্রহ করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। গাছ নার্সারির হোক বা বন-জঙ্গলের তা দিয়ে বনসাই চর্চা শুরু করার আগে কয়েকটি বিষয় ভালোভাবে নজর দেওয়া দরকার। প্রথমে দেখতে হবে গাছের গুঁড়ি বা কান্ড। গাছ পুরোনো হয়ে গেলে তার গুঁড়ি শক্ত ও মোটা হয়ে যায়। এই অবস্থায় কান্ড ইচ্ছামতো বাঁকানো সম্ভব হয় না। বনসাই করার জন্য যে গাছ বাছাই করা হবে তার গুঁড়ি নীচের দিকে মোটা হবে এবং উপরে ধীরে ধীরে সমানুপাতে সরু হতে থাকবে। যদি দেখা যায় কোনো গাছের কান্ড নীচে সরু ও উপরে মোটা হয়ে পড়েছে তবে তা বাতিল করা দরকার। শাখা-প্রশাখা বা ডালপালার ক্ষেত্রে এই একই নিয়ম। সকল ডালপালাই গোড়ার দিকে মোটা ও আগার দিকে ধীরে ধীরে সরু হবে। ডালপাতার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় না থাকলে পরবর্তীকালে বনসাইয়ের ডাল বাঁকানো বা ট্রেনিং এর সময় তা ভেঙে যেতে পারে অথবা শুকিয়ে যেতে পারে।

গাছের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল শেকড়। কারণ শেকড় বা মূলের সাহায্যেই উদ্ভিদ মাটি থেকে জল ও অন্যসব পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে। শেকড় ভালো না হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শেকড় তালগোল পাকিয়ে গেলে শেকড়ের সঠিক বৃদ্ধি হবে না এবং গাছও আশানুরূপভাবে বাড়বে না। দীর্ঘদিন একই টবে থাকার ফলে শেকড় গোল পাকিয়ে যায়। এইজন্য অনেক সময় নার্সারি থেকে কিনে আনা বড় গাছ বা পুরোনো গাছের শেকড় ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হয়। টবের থেকে অতি সাবধানে মাটিশুদ্ধ গাছটি তুলে বড় পাত্রে জল নিয়ে তার মধ্যে মাটি-শেকড় সহ গাছটিকে তিন-চার ঘন্টা রেখে দিন। তারপর আলতোভাবে নাড়িয়ে গাছের কান্ড ধরে ওঠালেই শেকড়ের  সঙ্গে লেগে থাকা মাটি পাত্রের জলে গুলে যাবে এবং শেকড়ের গঠন কেমন তা চোখে দেখতে পারেন। মূলের গঠন ঠিকমতো না থাকলে তাকে কেটেকুটে সঠিক অবস্থায় আনা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার সবক্ষেত্রেই গাছের শেকড় কাটতে হবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে। কাটতে হবে তেরছাভাবে, কাটা অংশটি যেন ওপর দিকে মুখ করে থাকে। কাটা অংশে ইংন্ডল অ্যাসিটিক অ্যাসিড বা অক্সিন জাতীয় হরমোন পাউডার লাগাতে পারলে ভালো। তারপর উপযুক্ত মাপের টবে গাছটি আবার বসিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে বনসাই করার দিকে।

Join our mailing list Never miss an update