দুধ নয়; খান দই

দুধ নয়; খান দই

“ দুধ নয়; খান দই ”;  -ডাঃ পার্থ প্রতিম। প্রবাহ তিস্তা তোর্ষা পত্রিকায় প্রকাশিত।
দুধ নয়, গরমকালের অন্যতম আদর্শ খাদ্য হল দই। অবশ্যই টক দই। তবে বাজারের কেনা দইতে যাবেন না। বাড়িতেই পেতে নিন দই। অল্প গরম দুধে কিছুটা দই মিশিয়ে রেখে দিন তাহলেই ১২ ঘন্টা পর আপনার দুধটি দই হয়ে যাবে। এই কিছুটা যে দই মেশানো হয় তার অনেক প্রচলিত নাম আছে। কেউ বলেন সাজা, কেউ বা বীজ, কেউ বা আবার একে দম্বল বলেন। সে যে নামেই ডাকুন না কেন এই সাজাতে থাকে দেহের এক অতি উপকারী জীবাণু। নামটা একটু খটমট। ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস ( Lactobacillus acidofilus ) । যার অন্যতম কাজ দুধের শর্করা বা ল্যাকটোজকে ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত করা। আমাদের অন্ত্র বা ইন্টেস্টাইন ( Intestine ) -এর মধ্যেও বাসা বেঁধে থাকে ল্যাকটোব্যাসিলাস জীবাণু। যা দই-এর ল্যাকটোব্যাসিলাস-এর সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে। এই জীবাণু পৌষ্টিক নালীর ভেতর সর্বদা সেনাবাহিনীর মত তৈরী। অন্ত্রে কোন রকম ক্ষতিকর জীবাণু বাসা বাঁধতে চাইলে এই ল্যাকটোব্যাসিলাস সঙ্গে সঙ্গে তাদের জবাই করার জন্য চেষ্টা চালায়।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য ( যেমন- ভাত, রুটি,আলু...) পরিপাকে ল্যাকটোব্যাসিলাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। মাছ, মাংসে থাকা জটিল প্রোটিন অণুকে ভেঙে সরল অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরীতে দই বিশেষভাবে সাহায্য করে। খাদ্যের পচন রোধ করতে দই বিশেষ ভূমিকা নেয়। গরমের দিনে মাছ-মাংসতে দই মিশিয়ে রাখুন, তাহলে অনেকক্ষণ পচন মুক্ত থাকবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে দই আপনাকে বিশেষ সাহায্য করতে পারে।
যারা মোটা বা স্থলকায়া তাদের জন্য আদর্শ হল দই। দুধ ও ছানার তুলনায় দইয়ে ক্যালরিটিক ভ্যালু  কম । সম ওজনের দুধ বা ছানা খেলে যে পরিমাণ শক্তিমূল্য আপনার শরীরে ঢোকে দইতে সে তুলনায় কম। তাছাড়া দইতে দুধ বা ছানার চেয়ে বেশী ভিটামিন পাওয়া যায়। ফ্যাট বা চর্বি ছানার তুলনায় দইতে কম থাকে।

দই খেলে ঠান্ডা লাগবে বা গলার বারোটা বাজবে এ ভাবনা অনেকের মগজে রয়েছে। এধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। দই ছাড়া দুপুরের খাওয়া শেষ হতো না কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের। তবে ফ্রিজের ঠান্ডা দই খেলে তাতে কারো কারো গলা বসে যেতে পারে। তার দোষ দইয়ের ঘাড়ে চাপানো যাবে না।  এক্ষেত্রে দায়ী হল অতিরিক্ত ঠান্ডা দই। আর এ ঘটনা তো যে কোনো খাবারেই হতে পারে। আইসক্রিম, জল, ডাল-ভাত যাই খান না কেন। ফ্রিজ থেকে বের করে বেশ কিছুক্ষণ সাধারণ তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে। তারপর সেটা খাওয়া চলতে পারে। দই খেলে অ্যাসিড হয় এ ধারণা এক্কেবারে ভুল। বরং দই খেলে অ্যাসিড কমে। আগেই বলেছি মাছ, মাংস, ডিমে থাকা জটিল প্রোটিন দই এর ক্রিয়ায় সরল প্রোটিন বা অ্যামিনো অ্যাসিডে পরিণত হয়। বিশেষতঃ এই গরমকালে মাছ, মাংস, ডিম খাওয়ার পরে অবশ্যই টক দই খাবেন। টক দই খেতে যদি আপনার বিশেষ  ইচ্ছে না করে তবে দইয়ের সাথে সামান্য বিট নুন মিশিয়ে নিতে পারেন। দই শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক ও হাড়ের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ভালোভাবে সরবরাহ করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন বিশেষতঃ গরমকালে প্রতি শিশুকে প্রতিদিন ১৫০ গ্রাম করে ও পূর্ণ বয়স্কদের ৩০০ গ্রাম করে দই খওয়া উচিত। দইয়ের এত যে গুণাগুণ বললাম এসবই কিন্তু বাড়িতে পাতা বিশুদ্ধ দুধের দইয়ের ক্ষেত্রে খাটে। বাজার থেকে কেনা রঙিন ও ভেজাল মেশানো দই খেয়ে কারও যদি পেট খারাপ, অ্যাসিড, বদ হজম এসব হয়;  তার জন্য আমাকে আবার গাল দেবেন না।

    এবার আসুন পাশাপাশি রেখে বিভিন্ন দুধ ও দইযের পুষ্টিমূল্য বিচার করা যাক্-

  ক্যালরি

ফ্যাট

(গ্রাম)

প্রোটিন

(গ্রাম)

কার্বোহাইড্রেট

(গ্রাম)

ভিটামিন

(ইউনিট)

মাতৃদুগ্ধ     ৬৫ ৩.৫ ১.২ ৬.৫৮   ১৩৭
ছাগলের দুধ ৭২ ৪.৫ ৩.৩ ৪.৬ ১৮২
মহিষের দুধ  ১১৭ ৮.৮ ৪.৩ ৫.১   ১৬০
গরুর দুধ  ৬৫ ৩.৫   ৩.৫  ৪.৭৫   ১৭০
গরুর দুধের ছানা  ২৬৫ ২০.৮ ১৮.০ ১.২ ২৭৩
গরুর দুধের দই ৬০ ৪.০ ৩.১ ৩.০ ৩৬৩
 

Join our mailing list Never miss an update