গিমে খান, তাজা থাকুন

গিমে খান, তাজা থাকুন

গিমে খান, তাজা থাকুন; ডাঃ পার্থপ্রতিম;  ১১ জুন ২০০৫;উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত

গ্রীষ্মকালের শাক গিমে শাক। তবে কম বেশি সারা বছরই মেলে। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপে ক্রমাগত ঘাম ঝরে শরীর যখন অবসন্ন হয়ে পড়ে, তখন প্রাণের শক্তিকে রক্ষা করে গিমা শাক, প্রকৃতিতে দাবদাহে গ্রীষ্মের গাছপালা যখন ঝলসে যায়, তখন সবুজ রঙের জৌলুসে মাটি সংলগ্ন হয়ে কান্ডের চারদিকে একটা বৃত্তের মত ডালপালা মেলে বেড়ে ওঠে গিমে শাক। সূর্যের প্রবল তাপে মৃতপ্রায় গাছপালার মাঝে এই গুল্মলতা যেন নতুন যৌবনের প্রতীক। গরমে যখন অন্য গাছেদের কাহিল দশা, গিমা শাকের  তখন ভরা যৌবন। ঋকবেদে গিমা গ্রীষ্মসুন্দরঃ। সারা ভারতে চার পাঁচটি প্রজাতির গিমেশাক পাওয়া যায়।
 

   অযত্নে অহেলায় বেড়ে ওঠা এ গাছটা খাবার তথা ওষুধ হিসেবে অত্যন্ত মূল্যবান। খেতে তেতো হলেও গিমা শাক খাবারের রুচি বাড়ায়। কৃমির সমস্যা কমায়। রক্তে হিমোগ্লোবিন অর্থাৎ লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়। গিমা শাক সেদ্ধ করে বড়া অথবা বেগুনের সঙ্গে চচ্চড়ি করেও খাওয়া যায়। গিমা শাকে খুব ছোটো ছোটো সাদা সাদা ফুল হয়। তাতে ফলও ধরে। ফলগুলি দেখতে যবের মতো। লিভারের যে কোনরকম সমস্যা এবং প্লীহার সমস্যাঘটিত রোগ সারাতে পারে গিমা শাক। যাঁদের জন্ডিস কিংবা ম্যালেরিয়া হয়ে গেছে তাঁরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নিশ্চিন্তে গিমা শাক রাখতে পারেন। গিমা শাকে অনেকগুলো জৈব রাসায়নিক থাকে । তার মধ্যে একটার নাম স্যাপোনিন। এই স্যাপোনিন হড়হড়ে ফেনিল পদার্থ। তাই গিমা শাক জলে চটকালে প্রচুর ফেনা হয়। গিমা শাকে টাইটারপিন নামে যে জৈব রাসায়নিক গুলো পাওয়া গেছে, তারাই লিভার ও প্লীহার রোগ সারাবার ব্রহ্মাস্ত্র। লিভারের সমস্যায় সাধারণত শাক খাওয়া চলে না। কিন্তু গিমেশাক ব্যতিক্রম।

যাঁরা গ্যাস অম্বলের সমস্যা জর্জরিত তাঁরা সপ্তাহে তিন-চারদিন খাবারের সঙ্গে গিমা শাক খেলে বিশেষ উপকার পাবেন। অম্বল ও পিত্তের আধিক্যের জন্য যাঁদের বমি হয়, তাঁরা এক চামচ গিমা শাকের রস ও আধ কাপ আমলকী ভেজানো জল মিশিয়ে সকালে খেলে বমির হাত থেকে রেহাই পাবেন, অম্বলও কমে যাবে। গিমা শাকের আর একটা গুণ হল, খিদে বাড়ায়, পেট পরিষ্কার করে অর্থাৎ গিমা শাক অ্যাপিটাইজার-ও। চামড়ার রোগ কমাতেও ওস্তাদ গিমা বা গিমেশাক। গিমে শাক বেটে চামড়ার প্রলেপ লাগালে, ফুসকুরি, ঘা, চুলকানি কমে যায়। বসন্ত রোগের গুটিগুলিকে পাকাতে বা বসাতে গিমা শাকের মূল বেটে বসন্তের গুটির উপর লাগালে গুটি গুলি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। কারণ, গিমেশাক একটা অ্যান্টিসেপটিক ভেষজ। যে সব মেয়েরা ডিসমেনোরিয়া তথা মাসিকের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা খাবারের সঙ্গে অথবা রস করে গিমে শাক খাবেন। অবশ্যই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন। যাঁদের অধিক রক্তপাত হয় তাঁরা গিমে শাক খাবেন না। ধরুন প্রচন্ড কানের যন্ত্রণা হচ্ছে, কমাতে পারে গিমে শাক। ক্যাস্টার অয়েলে গিমে শাক ভেজে লাগালে যতই কানের ব্যথা থাক না কমবেই, কমবে। নানা রোগের অব্যর্থ ওষুধ গিমে শাক। কারণ গিমে শাকে থাকে ফ্যাটি অ্যাসিড, গ্লুকোসাইড, অ্যালকালয়েড বা উপক্ষার ও উদ্বায়ী তেল। ভিটামিন ‘এ’-র একটি বড়ো উৎস গিমেশাক। ভিটামিন ‘এ’-র অভাবে যাঁরা চোখের কষ্টে ভুগছেন, তাঁদের জন্য গিমে শাক একটা রক্ষাকবচ।

Join our mailing list Never miss an update