ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি ? খেজুর খান

ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি ? খেজুর খান

ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি ? খেজুর খান; ডাঃ পার্থপ্রতিম।  ৭ নভেম্বর ২০০৯; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড নামক চর্বি বেড়ে গেছে? হার্টের রোগ, স্ট্রোকের আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেতে রোজ কয়েকটা করে খেজুর খান। ইসরায়েল গবেষকরা জানিয়েছেন, এক মাসেই ট্রাইগ্লিসারাইড ১৫ শতাংশ হারে কমে যাবে। ধমনির গাত্রে খারাপ কোলেস্টেরলের আস্তরণ জমাও আটকাবে এই খেজুর। অসুখের পর শরীরে বল ফিরে পেতে দুধের সঙ্গে খেজুর মিশিয়ে খান। বাচ্চা, বুড়ো সবার জন্যই এই নিদান। অল্পেতেই এনার্জি-হারা হন যাঁরা, তাঁদের জন্য দুধে জ্বাল দেওয়া খেজুর দ্রুত এনার্জি জোগাতে পারে। পরিশ্রমে ক্লান্ত মানুষকে দ্রুত চাঙ্গা করতে পারে খেজুর শক্তি। আধ ঘন্টাতেই। মুটিয়ে যাচ্ছেন যাঁরা, খাবার কম খেতে চান, তাঁদের জন্য নিদান হল, খেতে বসার আগে কয়েকটা খেজুর খেয়ে নিন। কম খেলেই পেট ভরে যাবে। খেজুরে পটাসিয়াম আছে প্রচুর। সে তুলনায় সোডিয়ামের পরিমাণ নগণ্য। তাই হাই ব্লাড প্রেসারের রোগীরা নিশ্চিন্তে খেজুর খেয়ে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। গর্ভবতী এবং অসুস্থ মহিলাদের জন্যও খেজুর দারুণ উপকারী।

ব্লাড সুগার নেমে যাওয়ার কারণে যাঁরা মূর্ছাপ্রবণ হয়ে পড়েন, তাঁদের জন্য খেজুর দ্রুত কার্যকারী নিদান। গর্ভবতীদের অবসাদ কাটাতে সাহায্য করে খেজুর। ১০০ গ্রাম খেজুরে ৮ গ্রাম খাদ্যআঁশ। পাশাপাশি নানা ধরনের খনিজ লবণও থাকে। শুধু হার্টের রোগভোগ থেকে রক্ষা করাই নয়, নিয়মিত খেজুর খেলে শ্বাসকষ্টজনিত রোগভাগেরও ব্যাপক শুশ্রুষা হয়। ওজন বাড়াতে চাইলেও খেজুর খেতে হবে। খেজুরের সাথে শশা অনেকটা করে। খেজুরে প্রচুর ক্যালসিয়াম। হাড়ের সমৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম দরকার। দাঁতের জন্যও। ওষুধরূপী ক্যালসিয়ামের চেয়ে খেজুর-ক্যালসিয়াম দ্রুত আত্মস্থ করে শরীর। খেজুর নিয়মিত খেলে হাড় পলকা হতে পারে না। দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসা আটকাতে পারে খেজুর। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। মাসল তথা মাংসপেশিকে উদ্দীপিত করে। গর্ভাবস্থার ৬ মাস পরবর্তী অধ্যায়ে জরায়ুর পেশিকে শক্তিশালী করার জন্য খেজুর খেতে বলা হয়। এই অধ্যায়ে খেজুর খেলে সন্তান ভূমিষ্ঠ করানোর প্রক্রিয়া সহজ হয়। সন্তান বেরিয়ে আসার পর রক্তপাতের পরিমাণও কমে। ব্লাড সুগার লো যাঁদের, তাঁরা খাই খাই বাই কমাতে মাঝেমধ্যে দুটো চারটে করে খেজুর খেতে পারেন।

    খেজুরের অনেক গুণ। কোরানেও তাই খেজুরের উল্লেখ আছে। একবার, দুবার নয়, ২০ বার। যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তাঁদের জন্য খেজুর শুশ্রুষাকারী। খেজুর হজমিকারক। খেজুর অন্ত্রে ক্যানসার হওয়া আটকায়। যৌনতাড়না বাড়ায়। হার্ট যাঁদের দুর্বল, তাঁদের জন্য রাতে ভিজিয়ে রাখা খেজুর সকালে থেঁতলে খাওয়া উপকারী। অতিরিক্ত মদ্যপানের জেরে হ্যাংওভার কাটাতে একইভাবে খেজুর খাওয়ার নিদান। খেজুর খেলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটিরিয়াদের সংখ্যাধিক্য ঘটে। খেজুরে সেলেনিয়াম থাকে। এই সেলেনিয়াম ক্যানসার হওয়া এবং ধমনি শক্ত হয়ে যাওয়ার ভোগান্তির আশঙ্কা হ্রাস করে। খেজুরে থাকে নিকোটিনিক, অন্ত্রের অসুস্থতাকে পরিচর্চা করে। খেজুরে আয়রনও আছে।  ১০০ গ্রাম খেজুরে জলীয় ভাগ ১৮.২৭ গ্রাম। শক্তি ২৫১ ক্যালোরি। প্রোটিন ২.১ গ্রাম। কার্বোহাইড্রেট ৬৬.৭৮ গ্রাম। খাদ্যআঁশ ৮ গ্রাম। সুগার ৬৩ গ্রাম। স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.০৩২ মিলিগ্রাম। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.০৩৬ মিলিগ্রাম। পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.০১৯ মিলিগ্রাম। সেলেনিয়াম ৩ মাইক্রোগ্রাম। ভিটামিন এ ১০ আন্তর্জাতিক ইউনিট। ভিটামিন সি ০.৪ মিলিগ্রাম। ভিটামিন ই ০.০৫ মিলিগ্রাম। ভিটামিন কে ২.৭ মাইক্রোগ্রাম। থিয়ামিন ০.০৫২ মিলিগ্রাম। রাইবোফ্ল্যাভিন ০.০৬৬ মিলিগ্রাম। নিয়াসিন ১.২৭৪ মিলিগ্রাম। ভিটামিন বি সিক্স ০.১৬৫ মিলিগ্রাম। ফোলেট ১৯ মাইক্রোগ্রাম। প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ০.৫৮৯ মাইক্রোগ্রাম। ক্যালসিয়াম ৩৯ মিলিগ্রাম। আয়রন ১.০২ মিলিগ্রাম। ম্যাগনেসিয়াম ৪৩ মিলিগ্রাম। ফসফরাস ৬২ মিলিগ্রাম। পটাসিয়াম ৬৫৬ মিলিগ্রাম। সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম। জিঙ্ক ০.২৯ মিলিগ্রাম। তামা ০.২০৬, ম্যাঙ্গানিজ ০.২৬২ মিলিগ্রাম।  

Join our mailing list Never miss an update