এই নরদেহে- নারীদেহে নর

 এই নরদেহে- নারীদেহে নর

আমাদের এই নরদেহের গঠনশৈলীতে রয়েছে বহু বিস্ময়ের ছোঁয়া। শরীরবৃত্তীয় ক্ষেত্রে নিয়ত ঘটে চলেছে চমকপ্রদ ঘটনাবলী। যা অনেকের কাছেই অজানা। তাই, এই সব নিয়ে প্রবাহ তিস্তা তোর্ষার পাতায় থাকছে ধারাবাহিক চিত্রায়িত তথ্যকথা  “ এই নরদেহে ” কলম ধরেছেন -ডাঃ পার্থপ্রতিম।
নারীদেহে নর
নর ও নারীদেহের স্বাভাবিকভাবেই বিস্তর মিল। পৌষ্টিক তন্ত্র, সংবহন তন্ত্র ও অন্যসব অঙ্গ তন্ত্রের মতো জননতন্ত্রেও পুরুষ ও নারীর অনেক সাদৃশ্য। পুরুষাঙ্গের মতো একই রকম অঙ্গ রয়েছে নারীদেহে। বাঙলায় যাকে বলে ভগাঙ্কুর,  ইংরাজিতে ক্লিটোরিস (Clitoris)। এটি পুরুষলিঙ্গের বিবর্তিত রূপ। ডাক্তারী ভাষায় আমরা বলি হোমোলোগি (Homologue)। নারীর যোনির ভেতরের ওষ্ঠ বা লেবিয়া মাইনরের যেখানে মিলিত হয়েছে, যোনিদ্বার ও মুত্রছিদ্রের ওপরে এটি থাকে। শুধু মানুষ নয়; মোটামুটিভাবে সব স্ত্রী স্তন্যপায়ীদের যোনিতে এই অংশটি দেখা যায়। ব্যতিক্রমীভাবে স্ত্রী উটপাখি (Ostriches) -র মধ্যেও ক্লিটোরিস রয়েছে।  

ভগাঙ্কুর যোনির বহিঃভাগে একটি ছোট্ট বোতামের মতো অংশ। বাইরে থেকে এর গ্ল্যান্স বা মুন্ডটি দেখা যায়। বাইরে থেকে এটি বড়জোর আধা ইঞ্চি থেকে পৌনে এক ইঞ্চি। বাকীটা থাকে ত্বকের নিচে। মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের সময় এর গঠন কাঠামো নজরে আছে। ভেতরে এটি প্রায় চার ইঞ্চি লম্বা। প্রায় পুরুষ লিঙ্গের মতো। পুরুষাঙ্গের মতো ক্লিটোরিসেও করপাস ক্যাভারনোসা (Corpus cavarnosa)  পেশীটি রয়েছে। তবে কারপাস স্পঞ্জিওসাম পেশীটি (Corpus spongiosum)  সেভাবে থাকে না।
জননক্রিয়ায় এর তেমন কোন সক্রিয় অংশ নেই। ভগাঙ্কুর কেটে বাদ দিলেও; সন্তান উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয় না। তবে নারীর যৌনতৃপ্তি প্রবলভাবে ব্যহত হয়। ছোপকাটা হায়না (Spotted Hyena), স্পাইডার বানর (Spider Monkey), লেমুর জাতীয় বানরের(Lemurs) ক্ষেত্রে এটি বেশ বড় থাকে।  মুত্রত্যাগ- সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
স্বাভাবিকভাবেই মানুষের সৃষ্টিলগ্ন থেকে এই অঙ্গটি থাকলেও এর আবিস্কার তুলনামূলকভাবে অনেক পরে হয়েছে। লিখিত দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে একথা বলাই যায়। প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় ইতালীয় চিকিৎসক রিয়ান্ডো কলাম্ব এর ১৫৫৯ সালে লেখা ‘ডি রি অ্যানাটোনিয়াল’ বইটিতে। যদিও তার দু’বছর পর আর এক ইতালীয় চিকিৎসক গ্যাব্রিয়েরো ফেলোপিন্ড বিভিন্ন প্রমাণসহ দাবী করেন তিনিই এই ভগাঙ্কুরের মুল আবিস্কারক।

সন্তান উৎপাদনে এর তেমন ভূমিকা নেই। তবে নারীদেহে যৌন উত্তেজনার সময় এটি বেশ বড় ও লম্বা হয়ে যায়। ঠিক একেবারে পুরুষাঙ্গের মতো। যৌন মিলনের সময় পুরুষাঙ্গের ঘর্ষণে এ থেকে উত্তেজনা বেড়ে যায়। এছাড়াও স্পর্শ ও আলতো মর্দনে  তীব্র সুখানুভূতি ছড়িয়ে পড়ে। আসলে ক্লিটোরিসে প্রায় আট হাজার নার্ভ এন্ডিং বা স্নায়ু তন্তুর প্রান্তভাগ রয়েছে। সাধারণভাবে পিউডেন্ডাল নার্ভ (Pudendal nerve), পেরিনিয়াল নার্ভ (Perineal nerve), ডর্সাল নার্ভ অফ ক্লিটোরিস (Dorsal nerve of the Clitoris) এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সে কারণে এটি অতি মাত্রায় সংবেদনশীল। এই সংবেদনশীলতা শরীরি সখ্যতার সময় যোনিপথকে রসসিক্ত ও পিচ্ছিল করে তোলে। যোনিপথ ছন্দবদ্ধতার সংকুচিত প্রসারিত হয়। স্বর্গীয় তরঙ্গে আন্দোলিত হয় হৃদয়- তনু- মন। অর্গাজম(Orgasms) বা চরমানন্দে ভেসে যায় অন্তর-বাহির। যার ফলে নারীর কাছে মিলন উপভোগ্য ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তবে এটা সত্য ঘটনা যে, আমাদের দেশে বিশেষতঃ পুরুষদের শারীরবিজ্ঞানের অজ্ঞতার কারণে বেশীরভাগ নারী এই চরমানন্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।
    নারীর যৌনজীবন নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে ও হচ্ছে সারা দুনিয়া জুড়ে। শরীর বিজ্ঞানী উইলিয়াম এইচ. মাষ্টার (William H. Master), ভার্জিনিয়ার গবেষক ই. জনসন (E. Johnson), আমেরিকায় জন্ম হওয়া জার্মান যৌন গবেষক শিরি হিট (Shere Hite) ও আরো অনেকে এ বিষয়ে বহু মূল্যবান তথ্য আমাদের দিয়েছেন। যা এই পত্রিকার ক্ষুদ্র অবসরে এখনই তুলে ধরা যাচ্ছে না।

Join our mailing list Never miss an update