এই নরদেহে- পর্ব- ৩

এই নরদেহে- পর্ব- ৩

আমাদের এই নরদেহের গঠনশৈলীতে রয়েছে বহু বিস্ময়ের ছোঁয়া। শরীরবৃত্তীয় ক্ষেত্রে নিয়ত ঘটে চলেছে চমকপ্রদ ঘটনাবলী। যা অনেকের কাছেই অজানা। তাই, এই সব নিয়ে প্রবাহ তিস্তা তোর্ষার পাতায় থাকছে ধারাবাহিক চিত্রায়িত তথ্যকথা  “ এই নরদেহে ” কলম ধরেছেন -ডাঃ পার্থপ্রতিম।
“কড়ি ও কোমল”
আমাদের নরদেহের এই অঙ্গটি কখনো নরম তুলতুলে, আবার কখনো দৃঢ় ও ঋজু। পুরুষের প্রধান যৌনাঙ্গ বলতে তার মূল দেহের সাথে লাগোয়া পুরুষাঙ্গকে বোঝায়। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন- ইংরাজীতে পেনিস (Penis), সংস্কৃতে শিশ্ন বা সাধনদন্ড, বাংলাতে লিঙ্গ, গ্রাম্য ভাষায় এর আরও অনেক ডাক নাম রয়েছে। শুধু মানব নয়; যে কোন স্তন্যপায়ী পুরুষের এ অঙ্গটি এমনভাবেই রয়েছে।
লিঙ্গের দুইটি প্রধান কাজ রয়েছে। এই নলাকার অঙ্গের মধ্য দিয়ে মূত্র ও শুক্র দেহের বাইরে বেরিয়ে আসে। এই ব্যবস্থার মধ্যে একটা অদ্ভুত দ্যোতনা লুকিয়ে আছে। মূত্রের মাধ্যমে দেহের ভেতরে উৎপন্ন হওয়া ময়লা বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে আসে। আর শুক্রের সাথে বেরিয়ে আসে আমাদের এই নশ্বর দেহ থেকে তৈরী হওয়া এক অবিনশ্বর বীজ। যা মানুষকে দেয় সৃষ্টির আনন্দ, যা তুলে ধরে জীবনের অমরত্ব। প্রকৃতির বিধানে উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট দুটি পদার্থই পুরুষাঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে আসে।

আমাদের পুরুষাঙ্গটি মাংস দিয়ে তৈরী এক নরম পদার্থ। এর ওপরে পাতলা চামড়ার আবরণে ঢাকা থাকে। সাধারণভাবে বিশ্রাম অবস্থায় এটি লম্বায় ২-৩ ইঞ্চি বা তার থেকে কম হয়। কিন্তু উত্তেজিত হলে এটি শক্ত হয়ে সোজা হয়ে ওঠে। সে সময় এর আকার বেড়ে গিয়ে ৬-৭ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। তখন এর পরিধি শান্ত অবস্থার চাইতে অনেকটাই বেড়ে যায়। অর্থাৎ শান্ত অবস্থা থেকে এটি অনেকটা মোটা হয়ে ওঠে। শান্ত অবস্থায় দেখলে মনে হয় এটি বুঝি খুব নরম মাংসের তৈরী। আর উত্তেজিত অবস্থায় যখন এটি দাঁড়িয়ে যায় তখন মনে হয় এটি শক্ত, হাড় যুক্ত। কিন্তু বাস্তবিকভাবে লিঙ্গের মধ্যে কোন হাড় থাকে না। এটি আগাগোড়া স্পঞ্জের মতো ছিদ্র প্রকোষ্ঠ যুক্ত, বিশেষ ধরনের মাংসপেশি দিয়ে তৈরী। লিঙ্গের কেন্দ্রে থাকে কারপাস স্পঞ্জিওসাম পেশী (Corpus spongiosum)। এই পেশীকে দু’পাশ থেকে ঘিরে রাখে করপাস ক্যাভারনোসা (Corpus cavarnosa)। যখন কোন পুরুষ যৌনগত ভাবে উত্তেজিত হয় তখন তার লিঙ্গের পেশিগুলির মধ্যে রক্ত চলাচলের পরিমাণ বহুগুণ বাড়ে। বেড়ে যায় রক্তচাপ। তখন এটি বড়, দৃঢ় ও সোজা হয়ে ওঠে। লিঙ্গের ভেতর রক্ত চলাচলের বিষয়টি শুরু হয় মানসিক কারণে। আসলে যৌন উত্তেজনা প্রথমে জাগে মানবমনে। তারপর তা প্রকাশিত হয় দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলিতে। মনই স্নায়ুর দ্বারা সংকেত পাঠিয়ে ইন্দ্রিয়ের মধ্যে কলকাঠি নাড়ে। প্যারাসিমপ্যাথেটিক (কলিনার্জিক) নার্ভ ও নন অ্যাড্রেনার্জিক নার্ভের প্রভাবে আমাদের সাধনদন্ডে জটিল জৈবরাসায়নিক খেলা চলে। নাইট্রিক অক্সাইড সিনথেজ নামের উৎসেচকের সাহায্যে এল-আর্জিনিন(L-arginine) থেকে তৈরী হয় নাইট্রিক অক্সাইড। এই নাইট্রিক অক্সাইড(NO) লিঙ্গের মধ্যে রক্তের চাপ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। লিঙ্গটি কঠিন ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। 

আসলে এটি শক্ত বা খাড়া না হলে স্ত্রী যোনীতে প্রবেশ করে শুক্রাণু পৌঁছে দিতে পারবে না। আবার যখন এটি শুক্র নিগর্মন করে দেয়, তখন সে ধীরে ধীরে চুপসে- কুকড়ে ছোট হয়ে যায়। বিষয়টি বেলুনের মধ্যে হাওয়া ভরার মতো। লিঙ্গের পেশীতে ভেতরে থাকা খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেলুনগুলিতে হাওয়ার পরিবর্তে রক্ত প্রবেশ করে। আসলে এটি বিশেষ প্রয়োজনে এমনটি হয়। কারণ পুরুষের লিঙ্গ শক্ত  না হলে স্ত্রী যোনীর মধ্যে সহজে ঢুকতে পারে না ও সবেগে শুক্র নিঃসরণ করতে পারে না। বীর্য বের করে দেওয়ার পরেই লিঙ্গের শক্ত হয়ে থাকার কাজটি ফুরিয়ে যায়। সাথে সাথে শরীর ও মনের উত্তেজনা কমে আসে। স্পঞ্জের মতো কোষগুলিতে যে রক্ত প্রবেশ করেছিল তা সরে আসে। রক্তচাপ কমে, লৌহ কঠিন লিঙ্গ নরম-শিথিল ও ছোট হয়ে পড়ে। অর্থাৎ যে ছিল কড়ি, সেই আবার কোমল। পল্লীগীতিকার হয়তো বলবেন- “ একই অঙ্গে এতো রূপ, দেখিনি তো . . .।”

Join our mailing list Never miss an update