এই নরদেহে- পর্ব- ২

এই নরদেহে- পর্ব- ২

আমাদের এই নরদেহের গঠনশৈলীতে রয়েছে বহু বিস্ময়ের ছোঁয়া। শরীরবৃত্তীয় ক্ষেত্রে নিয়ত ঘটে চলেছে চমকপ্রদ ঘটনাবলী। যা অনেকের কাছেই অজানা। তাই, এই সব নিয়ে প্রবাহ তিস্তা তোর্ষার পাতায় থাকছে ধারাবাহিক চিত্রায়িত তথ্যকথা  “ এই নরদেহে ” কলম ধরেছেন -ডাঃ পার্থপ্রতিম।
“ক্ষুদ্রতম- বৃহত্তম”
আমাদের এই নরদেহের জননতন্ত্রেই উৎপন্ন  হয় মানবদেহের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে ছোট কোষগুলি। নারীর ডিম্বাশয় থেকে বেরিয়ে আসা ডিম্বাণু সবচাইতে বড় মানব কোষ । এর ব্যাস মোটামুটিভাবে ০.১মিলিমিটার। আকারে গোলাকার। মাইক্রোস্কোপ ছাড়া একমাত্র ডিম্বাণু কোষকেই আমরা খালি চোখে দেখতে পারি। প্রতি ২৮ দিন পরপর এক বা দু’টি ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে বেরিয়ে ডিম্বনালী হয়ে নারী জরায়ুতে পৌঁছায়।  পুরুষের দু’ পায়ের মাঝে ঝুলতে থাকা স্ক্রোটাম থলির মাঝে থাকে শুক্রাশয়। এই একজোড়া শুক্রাশয়ের প্রতিটি ডিমের আকৃতির। প্রতিটির ওজন ১২ থেকে ২০ গ্রাম।  এখানেই উৎপন্ন হয় শুক্রাণু। মানবদেহের ক্ষুদ্রতম কোষ।

এটা দেখতে অনেকটা ব্যাঙ্গাচির মতো। ছোট্ট লেজ নাড়িয়ে ব্যাঙ্গাচির মতো সাঁতার কেটে এগিয়ে যেতে পারে। শুক্রাণুর দেহে মাথা, ঘাড়, দেহ ও লেজ রয়েছে। মাথাটি প্রায় চার থেকে পাঁচ মাইক্রন লম্বা, আর এর ব্যাস মোটামুটিভাবে আড়াই থেকে সাড়ে তিন মাইক্রন (এক মাইক্রন= এক মিলিমিটারের এক হাজার ভাগের একভাগ)।
আমাদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর  ক্রোমোজমের সংখ্যা, দেহকোষের ক্রোমোজম সংখ্যার অর্ধেক। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনের ফলে যখন জাইগোট উৎপন্ন হয়; তখন আবার দু’ইটি অর্ধেক সংখ্যক মিলে পূর্ণসংখ্যায় ফিরে আসে। শুক্রাশয় থেকে আসা শুক্রাণু বিভিন্ন রস ও পুষ্টি উপাদানে সংপৃক্ত হয়ে থকথকে বীর্যে পরিণত হয়। একটি স্বাস্থ্যবান পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতিবার মিলনের সময় দু থেকে চার মিলিলিটার বীর্য দেহের বাইরে বেরিয়ে আসে। এই বীর্য পুরুষের লিঙ্গের মধ্যে দিয়ে নারী যোনীপথ পেরিয়ে জরায়ুর মুখে চলে আসে। বীর্যে থাকা শুক্রাণু এরপর সাঁতার কেটে জরায়ুর মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে; ডিম্বাণুর সাথে মিলনের বাসনা নিয়ে।
পুরুষের শুক্রাশয়ে শুক্রাণুর উৎপাদন শুরু হয় ১২- ১৩বছর বয়স থেকে, চলতে থাকে আমৃত্যু। নারী ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর উৎপাদন শুরু হয় ১২- ১৩বছর বয়সে আর তা চলতে থাকে ৪৫- ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত। সে কারণে পুরুষেরা সুযোগ পেলে মরণকালেও বাবা হতে পারেন; নারীরা জীবনের সায়াহ্ণে  মা হতে পারেন না।
আসলে আমাদের এই মানবজীবন শুরুয়াৎ এই ক্ষুদ্রতমের সাথে  বৃহত্তমের একাত্মতার ফল। জীবনের প্রারাম্ভটি এমন বৈপরীত্যে ভরা কেন ? অলক্ষ্যে থেকে কোন্ কারিগর কী প্রতিনিয়ত গাঁথে চলেছেন ক্ষুদ্রের সাথে বৃহতের নব নব মালিকা? না কী, বাইরের হাজারো দ্যাখনদারীর আড়ালে আমাদের সবার হৃদমাঝারে লুকিয়ে আছে- এক ক্ষুদ্র আমি; আর এক বৃহৎ আমি। কবির কথায় - “ বাহিরের ছোপ, আঁচড়ে সে লোপ, ভেতরের রঙ পলকে ফোটে/ বামন-শুদ্র, বৃহৎ-ক্ষুদ্র কৃত্রিম ভেদ ধূলায় লোটে। ”

Join our mailing list Never miss an update