এই নরদেহে- জয়তু জরায়ু

এই নরদেহে- জয়তু জরায়ু

আমাদের এই নরদেহের গঠনশৈলীতে রয়েছে বহু বিস্ময়ের ছোঁয়া। শরীরবৃত্তীয় ক্ষেত্রে নিয়ত ঘটে চলেছে চমকপ্রদ ঘটনাবলী। যা অনেকের কাছেই অজানা। তাই, এই সব নিয়ে প্রবাহ তিস্তা তোর্ষার পাতায় থাকছে ধারাবাহিক চিত্রায়িত তথ্যকথা  “ এই নরদেহে ” কলম ধরেছেন -ডাঃ পার্থপ্রতিম।
‘জয়তু জরায়ু’
    আমাদের জীবনের সুরুয়াৎ হয় মায়ের গর্ভে এক ছোট থলির মাঝে। যাকে আমরা বলি জরায়ু বা ইংরাজিতে ইউটেরাস (Uterus)। ইউটেরাস শব্দটি ল্যাটিন থেকে এসেছে।  ডাক্তারী শাস্ত্রে এই নামটি বেশী চালু। এই আর একটি ইংরাজি প্রতিশব্দ রয়েছে ওম্ব (Womb)। এটি জার্মান ভাষা থেকে আসা শব্দ। বাংলায় জরায়ু ছাড়াও- গর্ভাশয়, মাতৃজঠর, আরো কিছু নামে একে বলা হয়ে থাকে।  নারী পুরুষের শারীরি সখ্যতার সময় পুরুষলিঙ্গ থেকে শুক্রাণু বের হয়ে যোনীপথ পেরিয়ে জরায়ুতে ঢোকে। নারী ডিম্বাণুর সাথে পুরুষ শুক্রাণুর মিলনের ফলে যে জাইগোট উৎপন্ন হয়; তা এই মাতুজঠরেই লালিত-পালিত হয়। পরিণত হয় মানবশিশুতে।
    গর্ভাশয় দেখতে অনেকটা ন্যাসপাতি বা পেয়ারা ফলের মত। এটার তলার দিকটা অনেকটা গোল। বোটার দিকটা টেনে সরু ও লম্বা করা। জরায়ু থাকে ন্যাসপাতি বা পেয়ারার উল্টোভঙ্গিতে। অর্থাৎ ন্যাসপাতি ও পেয়ারার তলার দিকটা থাকে উপরে এবং উপরের দিকটা থাকে নীচে। জরায়ুর রয়েছে যোনীর উপরের দিকে তলপেটের গহ্বরের। এটা সামনের দিকে একটু ঝুঁকে থাকে। দড়ি দিয়ে টাঙ্গানো ত্রিকোণাকার থলির মত। এর পিছনের থাকে কোলেন অর্থাৎ এখানে আমাদের দেহের মল জমা হয়ে থাকে। সামনের দিকে থাকে মূত্রথলি অর্থাৎ সেখানে মূত্র জমা হয়। এটা দড়িতে বাঁধা মশারির মতো ঝুলতে থাকে বলে; এর কোন পাকাপাকি একদম নিরেট অবস্থান নেই। মলভান্ডে মল জমা হলে সেটি জরায়ুকে পিছন দিকে ঠেলে দেয়। আবার যোনীদ্বারে পুরুষের লিঙ্গ প্রবেশ করলে জরায়ুকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়। আবার কোন রকম চাপ না থাকলে জরায়ু আবার নিজের অবস্থানেই এসে পড়ে। জরায়ুর ভেতরে তিনস্তর পেশী থাকে। একদম ভেতরের স্তরটিকে বলে এন্ডোমেট্রিয়াম, মাঝে থাকে মায়োমেট্রিয়াম ও সবচেয়ে বাইরে থাকে সেরোসা আবরণ। জরায়ু কোন কঠিন বাঁধনে বা শক্তপোক্তভাবে বাঁধা থাকে না। তিনজোড়া লিগামেন্ট জরায়ুকে তিনদিক থেকে উদরের মধ্যে ধরে রাখে। এই স্থিতিস্থাপক বাঁধনের ফলে জরায়ু সন্তান ধারণের সময় প্রয়োজন মত ফুলে ও সরে গিয়ে গর্ভস্থ ভ্রুণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা করে দেয়। শুধু গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের লালন পালন নয়; শারীরিক যৌন উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে গর্ভাশয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। নারী- পুরুষ মিলনের প্রথমপর্যায়ে ডিম্বাশয়, যোনী, ভগাঙ্কুরে রক্তের যোগান বাড়িয়ে দেয়। ফলে তৃপ্তিময় ও সার্থক হয়ে ওঠে সঙ্গম লীলা।

    একজন যৌবনপ্রাপ্ত নারীর জরায়ুর লম্বায় প্রায় ৭.৬ সে.মি (৩ইঞ্চি), চওড়ায় ৪.৫ সে.মি (১.৮ ইঞ্চি), এটি প্রায় ৩ সে.মি (১.২ ইঞ্চি) পুরু। এর ওজন মোটামুটি ভাবে ৬০ গ্রাম। গর্ভাবস্থায় জরায়ুর ওজন বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় এক কেজি (২.২ পাউন্ড)। আকার বেড়ে যায় প্রায় ২০ গুণ। আকার এতটা বেড়ে গেলেও কিন্তু জরায়ু পেশীর স্থিতিস্থাপকতা মোটেই কমে না। অর্থাৎ সাধারণ বেলুনের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়; এখানে তেমনটি হয় না। বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও; কৃত্রিম ভাবে এধরণের শক্তিধর থলি তৈরী করা এখনো সম্ভব হয়ে ওঠে নি। শরীরবিজ্ঞানীদের কাছে এটাই এক বিস্ময়।

Join our mailing list Never miss an update