ভ্রাম্যমান জাদুঘর দেখে খুশি বানারহাটের মানুষ;৬ বর্ষ ১৯০ সংখ্যা, ১৩ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার ১৯৯৮;দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত
ডুয়ার্স এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট রিভেলি অর্থাৎ ডিয়ারের ব্যবস্থাপনায় ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি বানারহাট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কলকাতার ভারতীয় সংগ্রহশালা তাদের ভ্রাম্যমান প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত জাদুঘরের বিচিত্র সংগ্রহ থেকে বেছে নিয়ে কুড়িটি দৃশ্য জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়াও প্রতিদিন রাত্রে আয়োজন করা হয় জীবজন্তু, দুস্প্রাপ্য পাখি ও রহস্যময় নানান বিষয়ের ওপর চলচ্চিত্র। এই জাদুঘর দেখে বানারহাটের মানুষ খুশি। গ্রামে গ্রামে জাদুঘর বাসের মধ্যে ও দু’পাশে সাজান হয়। বাসটি হল মিউজিও বাস। এর মধ্যে দেখা গেল হরপ্পা-সংস্কৃতি নগরের ভগ্নাবশেষ, সম্রাট অশোকের ধৌলি অনুশাসন, যাতে লেখা আছে বনানীকরণ এবং প্রান্তিক চিকিৎসার কথা, মহেঞ্জোদারোর সেই বিখ্যাত স্নানাগার, তামিলনাড়ু-র আরিকামেডুতে পুরাতাত্ত্বিক খননের দৃশ্য, ফতেপুর সিক্রির দেওয়ান-ই-খাসের কারুকার্যশোভিত কেন্দ্রীয় স্তম্ভ প্রভৃতি। এইসব চিত্তাকর্ষক বস্তু ছাড়াও প্রদর্শনীতে দেখা গেল নানান যুগের স্বর্ণমুদ্রা, মুঘল দরবারের চিত্রকলা, ভাস্কর্যে বুদ্ধজীবন, আর্থসামাজিক ঘটনার দলিল, শিলালিপি, ভারতশিল্পে নারীরূপ এবং দেবদেবী ও প্রাণীর ধাতুমূর্তি। বাংলার বিচিত্র মুখোশ, নাগা দারুশিল্প, চম্বা ও বাংলার মেয়েদের হাতে বোনা রুমাল এবং কাঁথাও প্রদর্শিত হয়েছে কয়েকটি দৃশ্যধারে। কয়েকলক্ষ বছরের ফুলপাতা ও পশুপাখির জীবাশ্ম, পার্বত্য এলাকায় পাখি, নানারকম ওষুধি এবং প্রকৃতির কিছু খেয়ালি সৃষ্টিও দেখানো হয়েছে এই জাদুঘরে। এইসব প্রদর্শিত বস্তুর মডেল তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টার অব প্যারিস আর ফাইবার গ্লাস দিয়ে। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে আসল নিদর্শনও তুলে ধরা হয়েছে।
কলকাতার ভারতীয় সংগ্রহশালার এই ভ্রাম্যমান জাদুঘর ও চলচ্চিত্র দেখবার জন্য বানারহাটে যথেষ্ট উৎসাহের সৃষ্টি হয়। ছাত্রছাত্রীদের জন্য বানারহাট উচ্চ বিদ্যালয়েও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয় দিনের বেলায়। ডিয়ারের পক্ষ থেকে জানানো হয় বানারহাটের আপামর মানুষ যাতে এই প্রদর্শনীর স্বাদ গ্রহণ করতে পারে তাই সর্বত্র মাইকে প্রচার ছাড়াও সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ক্লাব ও বিদ্যালয়গুলিতে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়।