ভিটামিন টিটামিন

ভিটামিন টিটামিন

ভিটামিন টিটামিন; ডাঃ পার্থপ্রতিম।২ জুন ২০০৭; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
ভিটামিন বা মিনারেল অনেক দিন রেখে দিলে কি তার কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে পারে?
    যদি ভিটামিন অনেক দিন ধরে রেখে দেওয়া হয় বা কৌটোর মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে অন্ধকার, শীতল স্থানে না সংরক্ষণ করা হয় তাহলে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অধিকাংশ ভিটামিন, মিনারেলের কার্যকারিতার মেয়াদকাল সাধারণত ভিটামিনটির কার্যকারিতার মেয়াদকালের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয় এবং সেই মতো ওষুধের কৌটোর লেবেলে লিখে দেওয়া হয়। মিনারেলের কার্যকারিতা সাধারণত নষ্ট হয় না। এমনকি ট্যাবলেট গুঁড়ো পাউডারে পরিণত হয়ে গেলেও তার মিনারেল অংশ অপরিবর্তিতই থেকে যায়। তা সত্ত্বেও বলা হয়, এটিকে ভিটামিন হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত!

ভিটামিন ওষুধ কি খাওয়ার রুচি বাড়ায়?
    কেউ কেউ দাবি করেন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাওয়ার রুচি বাড়ায়। পাকস্থলির এপিথিলিয়ামের ওপর ভিটামিনের সরাসরি প্রভাব থাকার কারণেও এমনটি হতে পারে। তবে রুচি বৃদ্ধিতে ভিটামিনের ভূমিকার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কী?
    অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হচ্ছে এমন পদার্থ যা শরীর নিজে নিজেই তৈরি করে বা খাদ্য থেকে পায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্য, ক্যানসার, হৃদরোগ বা অনান্য ডিজেনারেটিভ রোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের গতিকে প্রশমিত করে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের উদাহরণ দিতে হলে সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই-র নাম উল্লেখ করতে হয়।

ফ্রি র‌্যাডিক্যাল কী?
    ফ্রি র‌্যাডিক্যাল হচ্ছে অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল মৌলিক পদার্থ যা তৈরি হয় ধূমপান, বায়ুদূষণ, তেজষ্ক্রিয়তা বা প্রোটিন এবং চর্বির অসম্পূর্ণ ভাঙনের ফলে। অক্সিজেন থেকে তৈরি পারঅক্সাইড এবং সুপার অক্সাইডও ফ্রি র‌্যাডিক্যাল। এই ফ্রি র‌্যাডিক্যাল শরীরের ফ্যাটকে আক্রমণ করতে পারে, কোষঝিল্লিকে ফাটিয়ে ফেলতে পারে, আশেপাশের টিস্যুতে ক্ষতিকারক পদার্থ ছড়িয়ে দিতে পারে। কোষের স্থায়ী ক্ষতির কারণে এসব ক্ষেত্রে কোষের আকৃতি পরিবর্তন হতে পারে বা কোষের মৃত্যুও ঘটতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা ফ্রি র‌্যাডিক্যালের এই আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।

ভিটামিন খাবার আগে না পরে খাওয়া উচিত?
    ভিটামিনের সঠিক পরিশোষণের জন্য পরিপাক প্রণালীতে শর্করা, প্রোটিন এবং ফ্যাট থাকার প্রয়োজন আছে। খালি পেটে ভিটামিন খেলে পাকস্থলির অ্যাসিডে তা ধ্বংস হয়ে যায়। তাই ভিটামিন খেতে হলে তা আগে নয়, খাবার খাওয়ার পরই খেতে হবে।

কোন ভিটামিন সকালে আর কোন ভিটামিন রাতে খেতে বলা হয়। কেন?
    ভিটামিন বা মিনারেলের কার্যকারিতার ওপর নজর দিলে দেখা যায় কোনো ভিটামিন দিনের বেলায় আবার কোনো ভিটামিন রাতের বেলায় ভালো কাজ করে। কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করেই ভিটামিন খাওয়ার সময়ের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ক্রোমিয়াম খাদ্যে থাকা শর্করাকে ভেঙে শক্তিতে রপান্তরিত করে এবং দিনের বেলা এই কাজটির জন্য সব চাইতে ভালো সময়। ফলে পক্ষে দিনের বেলা ক্যালসিয়াম শিথিল থাকে বলে কৃত্রিম ক্যালসিয়াম সব সময় রাতের বেলায় গ্রহণ করাই ভালো।

ভিটামিন-এ চর্বিতে দ্রাব্য। তার মানে কি এই যে, যেসব খাদ্যে চর্বি আছে সেখানেই ভিটামিন এ পাওয়া যাবে?
    হ্যাঁ। প্রাণিজ উৎসের খাবারেই কেবল ভিটামিন এ পাওয়া যায়। যেমন কলিজা। প্রাণীর শরীরের কলিজাতে ভিটামিন এ জমা থাকে। এছাড়া কিছু সি ফুড, ঘি, ফ্যাট বা যুক্ত দুধ এবং ডিমের কুসুমেও ভিটামিন এ পাওয়া যায়। এইসব উৎস থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন এ কে সাধারণত প্রি-ফরমড ভিটামিন  এ বা রেটিনল বলা হয়।

গাজরে তো খুব একটা চর্বি নেই। তা হলে গাজরকে ভিটামিন-এ এর ভালো উৎস বলা হয় কেন?
সত্যিকার অর্থে গাজরে ভিটামিন এ থাকে না। তবে গাজর ছাড়াও অন্য হলুদ ফুল এবং শাকসবজিতে ক্যারোটিনয়েড নামক এক ধরনের পদার্থ থাকে। আমাদের শরীর এই ক্যারোটিনয়েডকে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত করে।
ক্যারোটিনয়েডকে প্রোভিটামিন বলা হয় বা ধারণা করা হয় এই জন্য যে ক্যারোটিনয়েডের প্রোভিটামিনের-এ এর মতো কার্যক্ষমতা না থাকলেও অনেক খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায়।

ছয় মাস বয়সের নিচের শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয় না কেন?
    শালদুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। তাই জন্মের পরপরই নবজাতক শিশুকে শালদুধ খেতে দিতে হয়। ছয় মাস পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে বলা হয়। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধই সমস্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিশ্চিত করে বলে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয় না।

বিটা ক্যারোটিন  কি ভিটামিন-এ এর চাইতে আলাদা কিছু করতে পারে?
    যদিও বিটা ক্যারোটিনকে ভিটামিন হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, তবুও শরীরে তা ভিটামিন এ-তে পরিবর্তিত হওয়া ছাড়াও অন্য ভূমিকা নিতে পারে। বিটা ক্যারোটিনের অন্য ভূমিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্যানসার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা। এসব কারণেই গবেষকরা বিটা ক্যারোটিনকে প্রিফরমড ভিটামিন থেকে আলাদা বিবেচনা করেন।  

Join our mailing list Never miss an update