ত্রিপুরা থেকে শিক্ষা

ত্রিপুরা থেকে শিক্ষা

ত্রিপুরা থেকে শিক্ষা;  ডাঃ পার্থপ্রতিম; ১৭ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা বুধবার ১১ আষাঢ় ১৪০৩;উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
ছায়া সুনিবিড় তরুতল, সেখানে বসে শিষ্যরা পাঠ নিচ্ছেন এক বৃদ্ধ গুরুর কাছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকল আশ্রম বালক বড় হয়ে উঠেছে সমান সুযোগ পেয়ে। গুরু বিশ্বাস করেন, ‘ন দানেন ক্ষয়ং যাতি বিদ্যারত্নং মহাধনম’। তাই আপন জ্ঞান ও উপলদ্ধি পরবর্তী প্রজন্মে নিঃস্বার্থভাবে পৌঁছে দেওয়াই তাঁর পূর্ণতা, তাঁর আনন্দ।
হ্যাঁ, এ এক সুদূর অতীতের কথা। এরপর পৃথিবী বহুবার পাক খেয়েছে সূর্যের চারপাশে। শিক্ষক জীবনে আজ আর বানপ্রস্থ সন্ন্যাস নেই, আছে আমৃত্যু গার্হস্থ্য। তাঁদের জীবন আজ আর আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। মনের চোরাগলি দিয়ে ঢুকে পড়েছে ভি সি আর-গাড়ি-স্যাম্পেন-ভোগবাদী পন্যের হাতছানি। আলো ঝলমল ইন্দ্রপুরীর ইশারায় আজ তারা দিশেহারা। স্কুলে বা কলেজের চাকরিটাকে মূলধন করে শিক্ষকেরা খুলে বসেছেন মুনাফার টোল।

দুর্মূখেরা বলেন, স্কুল বা কলেজের শ্রেণীকক্ষ হল শিক্ষক অধ্যাপকদের বিশ্রামস্থল। সারাদিনে টিউশনীর চাপে রণক্রান্ত শরীরটা ক্ষণিক বিশ্রাম নেয় ক্লাস নামক কক্ষে। আরো শোনা যায় কতিপয় শিক্ষক শ্রেণীকক্ষের চার দেওয়ালের মধ্যে সব কিছু খোলসা করে বলেন না। পাছে ছাত্রছাত্রীরা পাঠ্যবস্তু সঠিকভাবে বুঝে ফেলে, আর তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন না হয়। উপনিষদের সেই-গুহাহিতং গহ্বরেষ্ঠ অর্থাৎ জ্ঞান গুপ্ত ও গভীরকে সহজে পাওয়া যায় না। এর জন্য শ্রম ও ব্যাপক সাধনার প্রয়োজন রয়েছে। হ্যাঁ, এই নিশিদিন শ্রম ও সাধনার দায়িত্ব এখন ছাত্রছাত্রীদের নয়, তাদের অভিভাবকের উপর বর্তেছে। সংসারের বিবিধ মাসিক খরচের সাথে বিশেষ প্রশিক্ষকদের বেতনের জোগান অব্যাহত রাখতে হয়। নতুবা পুত্র-কন্যাকে উদ্বৃত্ত নম্বর (Surplus) আশা করা বৃথা। এক্ষেত্রে সেই প্রাচীন প্রবাদ ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’। না-না এখানেই শেষ নয়, নিন্দুকেরা আরো কিছু গোপন তথ্য দেয়। এ আর ডি জি’র নোট সি আর বি জি-র খাতায় লেখা চলবে না। তবেই নম্বর খ্যাচাং। অর্থাৎ বি জি ও ডি জি দু’জনের কাছেই বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এছাড়া অভিভাবকের ট্যাঁকের জোর ও প্রাইভেট টিউটরের ছাত্রের প্রতি মমত্ববোধ একত্রিত করতে পারলে অনেক সময় নাকি আগাম প্রশ্নও জানা যায়। পরীক্ষার খাতায় ছয় ও নয় হয়।
খবরে প্রকাশ, ত্রিপুরার ব্রামফ্রণ্ট সরকার এক বিশেষ নোটিশ জারি করে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো নিষিদ্ধ করেছেন। এই নোটিশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা কেউ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমাদের জাতির পিতা শিক্ষকদের বলেছিলেন Backbone of Nation. জাতির মেরুদন্ডে এই স্পন্ডিলাইটিসের (Spondylitis) চিকিৎসা অনতিবিলম্বে বঙ্গদেশেও শুরু করা উচিত। প্রয়োজনে ট্রাকশন (Traction) চলতে পারে।   

Join our mailing list Never miss an update