মেদ কমায় বেলুন টেকনিক; ডাঃ পার্থপ্রতিম। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৬; শনিবাসর; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
যাঁরা মোটা-হোঁতকা কিন্তু কোনো মতেই খাওয়া কমাতে পারেন না, সবসময় খাই খাই করেন, তাঁদের জন্য এক নতুন পদ্ধতি এসেছে, বেলুন টেকনিক। কেমব্রিজ মেডিক্যাল স্কুলের শল্য চিকিৎসক ইয়ান ম্যাকলিন ব্রিড এই পদ্ধতির আবিষ্কারক। ম্যাকলিন সাহেব ই-মেল এই নতুন তথ্য জানিয়েছেন। যাঁরা খুব মোটা, তাঁদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাকস্থলি বা স্টমাকের আকার স্বাভাবিকের থেকে একটু বড়ো থাকে। এর ফলে তাঁরা পেট ভরার জন্য বেশি পরিমাণে খাবার খান। আর তাঁদের ওজন আরও বাড়তে থাকে। বেলুন টেকনিকে পাকস্থলির মধ্যে একটি বেলুন ঢুকিয়ে সেটিকে ফুলিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে রোগী, সবসময় পেটভরা ভার অনুভব করে বেশি কিছু খেতে চায় না। এ কাজের জন্য গ্যাস্ট্রোস্কোপ নামের এক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। পাকস্থলির ভেতর ক্ষত ও পাকস্থলির ভেতরের দেওয়ালের অসুখ বিসুখ দেখার কাজে এ যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
প্রথমে চুপসানো বেলুন গ্যাসট্রোস্কোপের সাহায্যে পাকস্থলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর বিশেষ নলের সাহায্যে স্যালাইন বা ডিসটিলড ওয়াটার পাঠিয়ে বেলুনটি ফোলানো হয়। বেলুনটিতে থাকে একটি একমুখি ভালব, ফলে বেলুনের মধ্যে ঢোকানো জল সহজে বের হতে পারে না। রোগীর ওজন, উচ্চতা, রক্তচাপ, দেহে মোট মেদের পরিমাণ, বয়স এসব কিছু বিচার করে ডাক্তারবাবু ঠিক করেন বেলুনে কত লিটার জল বা স্যালাইন ভরা হবে। কোনো কারণে বেলুনটি ফুটো হয়ে গেলে তাতে কোনোরকম বিপদের সম্ভাবনা নেই। তবে পেপটিক আলসার, স্টমাক ক্যানসার বা আগে পাকস্থলীর অপারেশন হয়ে থাকলে এ পদ্ধতি সাবধানতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে।
বেলুনের বাজার দর ভারতীয় মুদ্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো। আর মাঝারি মানের নার্সিংহোমে গ্যাস্ট্রোস্কোপের সাহায্যে বেলুনটি বসাতে ও বার করতে খরচ হয় আরও পাঁচ হাজার টাকা। দেহের মেদ প্রয়োজন মতো কমে গেলে বেলুনটি সহজেই বের করে আনা হয়। তবে মেদবৃদ্ধির বিষয়ে প্রথম থেকেই সচেতন হতে হবে, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও পরিমিত খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে শক্ত হতে মোকাবিলা করতে হবে অনাগত আপদ-বিপদকে। তা না হলে গচ্ছা যাবে কাঁড়ি কাঁড়ি কড়ি। রসুন খান, মেদ কমবে। অ্যাড্রিনালিন হরমোনের চর্বি পোড়ানোর তৎপরতা বাড়িয়ে দেয় রসুন।
মেদ কমায় ফ্যাটমেল্টার
মেদ কমানোর অত্যাধুনিক পদ্ধতি হলো ফ্যাটমেল্টার। যাঁরা মোটা, পেটুক, কুঁড়ে, খাওয়া কমাতে পারেন না, নিয়মিত মানসিক জোর নেই যাঁদের নেই, সেই সব হোঁদল কুঁতকুঁতদের মুখে কলগেট হাসি ফোটাতে এসে গেছে কমপিউটার চালিত ফ্যাট মেল্টার প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য রোগীকে কোনো পরিশ্রম করতে হয় না। আধঘন্টা থেকে পয়তাল্লিশ মিনিট চুপচাপ শুয়ে থাকলেই হলো। যদি মনে করেন, তবে এ সময় টিভি দেখেতে বা ম্যাগাজিন পড়তে পারেন।
শরীরের যে সব জায়গায় চর্বি বেশি জমেছে সে সবস্থানে ইলেকট্রোড জেলি লাগিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সেখানে আটকে দেওয়া হয় ইলেকট্রোড প্যাড। মেশিনের মধ্য থেকে তারের সাহায্যে ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস বা তড়িৎস্পন্দন ইলেকট্রোড প্যাডের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে। এই স্পন্দন চর্বিকে গলিয়ে দেয়। দেহের মেদ গলানোর জন্য রোগীকে কোনোরকম জ্বালা, যন্ত্রণা, ব্যথা অনুভব করতে হয় না। হাতে পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরলে যেমন লাগে, এই মেশিন লাগানোর অনুভূতি অনেকটা সেইরকমই।
এই মেশিনে মেদ কমিয়ে দেওয়ার পর বেশির ভাগ ক্লিনিকে রোগীকে আয়ুর্বেদিক ওষুধ খেতে দেওয়া হয়, যাতে অদূর ভবিষ্যতে দেহে আর অতিরিক্ত চর্বি জমতে না পারে।
ফ্যাটমেল্টার পদ্ধতি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন অনুমোদিত এবং একান্তভাবে নিরাপদ। এমনকি বড়োসড়ো কোনো অস্ত্রোপাচারের পরেও এটি ব্যবহার করা যায়। তবে যাঁদের ফিটের ব্যামো, কিডনির অসুখ, সোরিয়াসিসের মতো চর্মরোগ, বুকে পেসমেকার আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি না করাই ভালো। মহিলাদের রজঃস্রাব চলাকালীন ফ্যাটমেল্টার মেশিন ব্যবহার করা উচিত নয়।
এই পদ্ধতিতে একদিনে দেহের সব চর্বি কমানো হয় না। কিছুদিন পরপর সিটিং দিতে হয়। একজন রোগীকে কতগুলি সিটিং দিতে হবে। তা নির্ভর করে শরীরের ওজন, বয়স, মাপ দেহে চর্বির পরিমাণ এসবের উপর।