কোন সাল লিপ-ইয়ার হবে?

কোন সাল লিপ-ইয়ার হবে?

‘ওভারল্যান্ড’ পত্রিকায় ১৫ জানুয়ারি ১৯৯২ (বুধবার) প্রকাশিত

যদি প্রশ্ন করা হয় কোন সাল লিপ-ইয়ার হবে? সবাই বলবে ‘এতো খুবই সহজ ব্যাপার, কোনও বছরের সংখ্যা চার দিয়ে বিভাজ্য হলেই বছরটি লিপ-ইয়ার হবে। অর্থাৎ সে বছরের ফেব্রুয়ারি মাসটি ২৮ দিনের পরিবর্তে হবে ২৯ দিনে।’
কথাটি আংশিক সত্য হলেও পুরোপুরি সত্য নয়, কারণ ১৭০০, ১৮০০ ও ১৯০০ সালের সংখ্যা চার দিয়ে বিভাজ্য হওয়া সত্ত্বেও বছরগুলি অধিবর্ষ হয়নি। এইসব অদ্ভুত ব্যাপারের কারণ হলো- দিন, মাস ও বছর শুধুমাত্র নাম বা সংখ্যা নয়।
পৃথিবীর সূর্য-পরিভ্রমনের ফল স্বরূপ ঋতু পরিবর্তন হয়। অতএব সূর্যের চারপাশে পূর্ণ আবর্তনে পৃথিবীর যে সময় লাগে ক্যালেন্ডারে বছরের দীর্ঘতা ঐ সময়ের সমান না হলে মাসের সঙ্গে ঋতুর কোনও সম্পর্ক থাকবে না। ডিসেম্বর মাসে আম পাকবে, জুন মাসে গায়ে লেপ জড়িয়ে ঘুমতে হবে, আরও অনেক কিছুই....।
আসল সমস্যা- সূর্যকে একবার পূর্ণ আবর্তন করে আবার প্রথম অবস্থানে ফিরে আসতে সময় লাগে প্রায় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড বা ৩৬৫.২৪২২১৮ দিন। সেদিক থেকে ডিসেম্বর মাসকে ৩১ দিনের পরিবর্তে ৩১১/৪ দিনে হিসেব করা বেশ মুসকিল, কেন না দিনরাত নির্ভর করে পৃথিবীর আহ্নিক উপর। দিন ও রাতের যোগফল সবসময় ২৪ ঘন্টার সমান। আবার যদি ০.২৪২২১৮ দিন সময় উপেক্ষা করে ৩৬৫ দিনে বছর ধরা হয় তবে একশতাব্দী বা ১০০ বছর আবর্তনের পর ক্যালেন্ডার প্রায় ২৪ দিন পিছিয়ে যাবে। ঋতুদের আগমন ২৪ দিন আগে হবে। কয়েক শতাব্দী পরে মাসের সঙ্গে ঋতুর কোনও সম্পর্কই থাকবে না।
যেমন ছিল খ্রীঃ পূঃ ৪৫ সালের আগে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সীজারের কালে। সে সময়কার বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ সসিজিনিসের পরামর্শ মতো সম্রাট সীজার ঘোষণা করেন- ৩৬৫ দিনে বছর ও প্রত্যেক চার বছর পরপর বছরে একদিনে বেশি হবে অর্থাৎ সে বছরটি হবে ৩৬৬ দিনে। সেকালে বছরের শেষ মাস ছিল ফেব্রুয়ারী, তার সঙ্গে অতিরিক্ত দিনটি যোগ করা হয়।
সম্রাট সীজারের সময় বছর শুরু হতো মার্টিস অর্থাৎ মার্চ মাস থেকে। মার্চ মাসের নামকরণের উৎস মঙ্গলগ্রহের নাম থেকে। রোমান পুরানে মঙ্গলগ্রহকে ‘ফসলের দেবতা’ বলা হয়েছে। এই মাসেই শুরু হতো ক্ষেতে ফসলের বীজ বোনার কাজ। এর পরের  মাস আপ্রিলিস বা এপ্রিল ল্যাটিন শব্দ ‘আপ্রেরী’ থেকে এসেছে। যার অর্থ ‘পরিস্ফুট হওয়া’, এ সময়ে গাছলতা সব পুষ্প ও পত্রমুকুলে ভরে যেত, এর রেশ চলতো মে মাস পর্যন্ত। ‘মে’ শব্দটি এসেছে রোমানদের বিদ্যা-বুদ্ধি ও প্রসন্নতার দেবী ‘মায়া’ থেকে। জুন মাসে প্রকৃতি ফুল ফুলে সেজে তারুণ্য লাভ করতো। ল্যাটিনে তরুণ শব্দের প্রতিশব্দ ‘জুবেনিস’ থেকে জুন কথাটির সৃষ্টি। এর পরের পঞ্চম থেকে দশম মাসের নাম সংখ্যা অনুযায়ী অর্থাৎ পঞ্চম কম্পুটীলিস, ষষ্ঠ সেক্সটীলিস, সপ্তম সেপ্টেমাব্রিস, অষ্টম অক্টোব্রিস, নবম নম্বাব্রিস ও দশম মাসের নাম ছিল ডিসেমব্রিস। রোমানদের প্রবেশদ্বারের দেবতা ‘জানুস’ থেকে এসেছে জানুয়ারি শব্দটি। নতুন গৃহে প্রবেশের সময় এই দুই মাথাওয়ালা দেবতার পূজা পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। বছরের শেষ সীমায় রোমানরা ‘দেবী ফেব্রুইলা’-র সামনে বসে সারা বছরের পাপ কাজগুলি স্বীকার করতো। তাদের বিশ্বাস ছিল দেবী পাপের ফল থেকে মুক্ত করবেন। একারণেই বছরের শেষ মাসের নাম হয় ফেব্রুয়ারী।
সম্রাট জুলিয়াস সীজার শুধু যে লিপ-ইয়ার বা অধিবর্ষের বিধান দিয়েছিলেন তা নয়; সে সময়কার পঞ্চম মাসের নাম কম্পুটীলিস-র পরিবর্তে নিজ নামানুসারে মাসের নাম জুলাই রাখেন। একই সঙ্গে বিধান দিলেন যে- মার্চ, মে, জুলাই, অক্টোবর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি ৩১ দিনে আর ফেব্রুয়ারি ২৯ দিনে ও অধিবর্ষের ক্ষেত্রে ৩০ দিনে হবে। বাকী সব মাসই ছিল ৩০ দিনে। সম্রাট সীজারের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী ভাইপো ‘আগস্টস্’ সিংহাসনে আরোহন করে এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন।
কাকা-কে অনুকরণ করে তৎকালীন ষষ্ঠ মাস সেক্সটীলিস-এর নাম বদলে ‘আগস্ট’ রাখলেন। কিন্তু দুঃখ একটা রয়েই গেল। কাকার নামের জুলাই মাস ৩১ দিনে আর আগস্ট মাস ৩০ দিনে। তিনি বছরের শেষ মাস ফেব্রুয়ারি থেকে একদিন কমিয়ে আগস্ট মাস ৩১ দিনে করেন। এর ফলে ফেব্রুয়ারি মাস হলো ২৮ দিনে ও অধিবর্ষে ২৯ দিনে। কাকার প্রতি কিছুটা শ্রদ্ধাবশতঃ তিনিই এই বর্ষপঞ্জীর নাম রাখেন জুলিয়ান-ক্যালেন্ডার।
   

Join our mailing list Never miss an update