জলের দাম দুধের সমান;ডাঃ পার্থপ্রতিম; ১৮ এপ্রিল ২০০৪; পৃষ্ঠা- এগারো; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
জলের দাম দুধের সমান। না, রাজস্থান বা গুজরাটের কথা বলছি না। এটি আমাদের ঘরের কাছের ঘটনা। এক লিটার বোতলবন্দি পানীয় জলের দাম বারো টাকা, দুধের দামও তাই। চোখের সামনে এ কারবার চললেও তেমনভাবে ভেবে দেখা হয় নি। ভাবিয়ে তুললো মনচাষা।
‘মনচাষা’ তাদের মানব সংস্কৃতি-বিষয়ক কাগজের জলবৈঠক সংখ্যা প্রকাশ করেছে। জল নিয়ন্ত্রণ ও মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ এবং নদী-বন্যা নিয়ে মনচাষা এবং এককমাত্রার যৌথ উদ্যোগে বসেছিল জলবৈঠক। কলকাতার সল্টলেকে মনচাষা-র বই বিপণন কেন্দ্রে আয়োজিত এই আড্ডা আসরে এসেছিলেন শ-খানেক পরিবেশ সচেতন মানুষ। মূল বক্তা ছিলেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক জয়ন্ত বন্দোপাধ্যায় ও নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। আড্ডায় যা কিছু আলোচনা হয়েছিল তাই বৈঠকি মেজাজে ধরা হয়েছে দুই মলাটের মধ্যে।
মূল বক্তাদের বিষয়গত জ্ঞান যে প্রশ্নাতীত তা পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, বন্যা ও নদীপ্লাবিত অঞ্চলে ঘোরাঘুরি বক্তাদের অভিজ্ঞতাকে যে ঋদ্ধ করেছে তা বলার অপেক্ষায় থাকেনি।
আমাদের এই মমতাময়ী মাটির পৃথিবীতে কীভাবে ম্যাঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে-পাহাড় তাকে বুকে ধরে, সেই জলের ঝরনা ক্যামনে নদী হইয়া বয়- সবকিছুই উঠে এসেছে সহজ সরল ভাষায়। কেন্দ্রীয় সরকারের নদী-সংযুক্তির পাঁচশো ষাট হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা আমাদের পরিবেশ এবং ইকোলজির ক্ষেত্রে যে মারাত্মক বিপদগুলি ডেকে আনতে পারে তা তুলে ধরেন। বিশিষ্ট সমাজসেবী পান্নালাল দাশগুপ্ত এবং নদী বিশেষজ্ঞ কপিল ভট্টাচার্য বহুকাল আগেই আমাদের জানিয়েছিলেন, বন্যার সমস্যাকে সামগ্রিক ভাবে দেখা দরকার। দরকার কমিউনিটি পার্টিসিপেশন। আসলে আমাদের দেশে যাঁরা বড়ো বড়ো ইঞ্জিনিয়ার বা নদী প্রকল্প তৈরির মাতব্বর তাঁরা পশ্চিমের তৈরি শাস্ত্র পড়া পন্ডিত। হাইড্রোলজি বা অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স সবই সেদেশের পরীক্ষা নিরীক্ষার ফল। সাহেবরা জানেন না এদেশের ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, পরিবেশ। অথচ পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়াররা তাঁদেরই অন্ধ অনুকরণ করে চলেছেন।
ধস, ভূমিক্ষয়, চা-বাগিচার কীটনাশক দূষণ এসব নিয়ে বৈঠক হোক না উত্তরবঙ্গেও। লিপিবদ্ধ হোক এ অঞ্চলের জীবন পরিবেশের ব্যথা বেদনার সালতামামি।
জলবৈঠক। মনচাষা। আলিপুরদুয়ার। জলপাইগুড়ি। তিরিশ টাকা।