দাওয়াই নিদানপত্র দিলেন ১- ডাঃ পার্থপ্রতিম; ২৭ মে ২০০৬ শনিবাসর; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকাতে প্রকাশিত
বয়স ১৯। কাঁধের ঠিক নিচটায় ছোটো ছোটো ফুসকুড়ি বা ব্রন জাতীয় হচ্ছে। খুব ব্যথা। দু-বছর ধরে নাকের ওপরেও ব্রন তথা অ্যাকনের বাড়াবাড়ি চলছে।
সুপ্রিয়া মজুমদার।
একদিন অন্তর একদিন, প্রতিদিন সকালে হেপার সালফ ২০০ খেয়ে যাও। প্রতিদিন একটা করে আর্সেনিকাম আলবাম ২০০ খাও। দুটো ওষুধই দু-মাস ধরে চলুক।
হোমিওপ্যাথিতে সানস্ট্রোকের কোনো চিকিৎসা আছে কি?
গৌতম বল্লভ।
আছে মাথায় প্রবল দপদপানি ব্যথা থাকলে গ্লোনোইন থারটি এবং বেলেডোনা ৬ বা ৩০ দিতে হবে। লো ব্লাড প্রেসার যাঁদের, সে সব ক্ষেত্রে জেলসিমিয়াম দিতে হবে। শরীর গরম হয়ে আগুনের হলকা বেরতে থাকলে, রগের দপদপানি ব্যাথা হলে বেলেডোনা থ্রি এক্স প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর এক চামচ করে দিতে হবে।
হৃদপিন্ডের কষ্ট, যন্ত্রনায় আর্নিকা থারটি প্রথম এবং প্রধান ওষুধ। হৃদপিন্ডের ওপর অত্যধিক চাপ বোধ হলে ল্যাকেসিস থারটি দিতে হবে দু- চার ডোজ। বমি দেখা দিলে বমিতে রক্ত দেখা দিলে এবং বরফ ঠান্ডা জল পানের পিপাসা জাগলে ঘন ঘন ফসফরাস সিক্স দিতে হবে। মাথায় ও মুখে রক্তোচ্ছ্বাস দমনে বেলেডোনা এবং গ্লোনোইনের ব্যাপক ভূমিকা।
সানস্ট্রোক আসলে সূর্যের তাপের প্রভাবে সার্দিগমি রোগ। চড়া রোদে অনেকক্ষণ ধরে থাকলে যেটা হয়, শরীরের উত্তাপ ভীষণভাবে বেড়ে যায়। মস্তিষ্কের তাপনিয়ন্ত্রণকারী অংশ যেটা, তার অংশবিশেষ উত্তেজিত ওঠে। শরীর গরম হয়ে আগুনের হলকা বেরতে থাকে। প্রচন্ড গরম ভাব এবং অস্বস্তিবোধ হতে থাকে। মনে হয় এই বুঝি হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে গেল। ব্যাপক মাথার যন্ত্রণাও হয়ে কারো কারো। মনে হতে থাকে মাথা বুঝি ফেটে যাবে। মাথার এই দাপাদাপি যন্ত্রণা ছাড়াও হার্টের স্পন্দন তথা কাজ বেড়ে যায়, নাড়ির গতি বেড়ে যায়। চোখ, মুখ লাল হয়ে ওঠে। রক্তের চাপ বেড়ে যায়।
খুব জ্বর চলে আসা মানে দেহের তাপমাত্রার অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটা। এ অবস্থায় জ্ঞান হারানো অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এরকম হলে রোগীকে ওষুধ দেওয়ার আগেই ঠান্ডা আবহওয়া, গাছের ছায়ায় বা ঠান্ডা ঘরে স্থানান্তরিত করতে হবে। প্রচুর ঠান্ডা জল খাওয়াতে হবে। লেবু, চিনি, নুনের ঠান্ডা জল বারে বারে দিতে হবে। ঘরের জানালা খোলা থাকতে হবে। বাইরে থেকে প্রচুর বাতাস আসার ব্যবস্থা করতে হবে। বরফ গলানো ঠান্ডা জলে মাথা বা শরীর বারবার স্পঞ্জ করতে হবে। মাথার পেছন দিকটায়, যেখানে মস্তিষ্কের তাপ নিয়ন্ত্রক অংশটি রয়েছে, যে জায়গায় ঠান্ডা দিয়ে বিশেষভাবে স্পঞ্জ করতে হবে।
প্রথমাবস্থার চিকিৎসার পর ল্যাকোসিস থারটি, সেলিনিয়াম ২০০, নেট্রাম কার্ব ৩০, নেট্রাম মিউর ২০০, দিতে হবে। যাঁদের শরীরে সেলেনিয়ামের ঘাটতি থাকে, তাঁরা সামান্য রোদে বেরলেই ক্লান্ত এবং অবসন্ন হয়ে পড়েন। সেলেনিয়ামের ঘাটতিতে খুব মারত্মক ধরনের কোষ্টকাঠিন্য হয়। এজন্য মাঝে মাধেই সরষে খেতে হয়, এতে সেলেনিয়ামের ঘাটতি মেটানো যায়। মাশরুমে, সামুদ্রিক স্যামন মাছে, সয়াবিন দুধের দই থেকে তৈরি টোফু-তেও সেলেনিয়াম মেলে।
চুল পড়ে পড়ে খালি হয়ে যাচ্ছে মাথা। টাক পড়ার পথে? বয়স মাত্র ১৮।
শুভ্রাংশ হাতি।
দিনে একবার বা দু-বার করে দু থেকে তিন মাস উসটিলাগো ২০০ খেয়ে চলুন। স্থানীয় ভালো কোনো হোমিওপ্যাথের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। চুল উঠে যাওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে।
সেলুনে দাড়ি কাটার পর থেকে মুখে দাদের মতো হয়ে গেছে। সারাক্ষণ চুলকায় আর গোটা ফেটে রস বেরয়। কী ওষুধ খাব? বিপুল মুখার্জি।
এর জন্য মোক্ষম ওষুধ সালফার আয়োডাইড ৩০। খোস-পাঁচড়া থেকে প্রচুর রস বেরোতে থাকলে, সঙ্গে চুলকানিও যদি হয় সালফার অয়োডাইড থারটি সুফল দেবে। স্থানীয় ডাক্তারবাবুকে দেখিয়ে জেনে নিন কতটা খাবেন।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ছি। সহপাঠীদের সঙ্গে মিশতে পারি না। শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং সহপাঠী কারো সঙ্গেই মন খুলে কথা বলা দূরে থাক, নিজের ওপর কনফিডেন্স-ই পাই না। কারো দিকে সরাসরি তাকাতেও পারি না। কে কেমন মানুষ-এরকম বিচারের সামর্থ্যও গড়ে ওঠেনি আমার। কী হবে?
নমিতা সান্ত্রা
কাউন্সেলিং দরকার। কাউন্সেলারের কাছে যেতে ইচ্ছে না করলে যেটা করতে হবে, নিজের ত্রুটিগুলির একটা তালিকা তৈরি করতে হবে। যেগুলি আয়নার সামনে করা দরকার, সেগুলি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খোলা মনে প্র্যাকটিশ করতে হবে। নিজেকে বোঝাতে হবে এইসব ত্রুটি খুব সহজেই মেটানো যায়। এক মাসের মধ্যেই নিজের ওপর-আস্থা ফিরে পাওয়া যাবে। দিনে দু-বার একটা করে জিলসেমিয়াম সিক্স খেতে হবে টানা তিন মাস।
লাইপোমা হয়েছে কপালের ওপর। কী করে সরাবো?
নৈঋত চক্রবর্তী
ফ্যাট জমে আবের মতো হলে, সেটি লাইপোমা। নিশ্চয়ই কোনো ডাক্তারবাবু এটিকে শনাক্ত করেছেন। এর জন্য ক্যালকেরিয়া ফস ১২ এক্স অথবা সাইলেসিয়া ২০০ খেতে হবে। কতটা খেতে হবে তা আবের আকৃতি দেখেই বলতে হবে। বদলে নিশ্চিন্তে খাওয়া যেতে পারে হ্যামোমেলিস ভার্জিনিকা ২০০-এর তিনটি পিলের সঙ্গে আর্নিকা মনটনা ২টি করে পিল দিনে দু-বার। তিনমাস চালিয়ে যেতে হবে।