ছায়ানীড়ের মনোজ্ঞ কোলাজ সন্ধ্যা; পবিত্র দাস; ৮ ডিসেম্বর ১৯৯৮; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
কোচবিহারের গুঞ্জবাড়ির একটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ছায়ানীড়। সংস্থার সদস্যরা একটি বুক ব্যাঙ্ক স্থাপন করে যষ্ঠ থেকে অষ্ঠম শ্রেণী পর্যন্ত দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত ফ্রি কোচিং দিয়ে যাবার সাথে সাথে মাঝে মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করে থাকে। গত ২৬ নভেম্বর ৯৮ কোচবিহার জেলা পরিষদের অতিথি নিবাসের হলঘরে সন্ধ্যে ৫টা থেকে রাত ৮-৩০ মিঃ পর্যন্ত ‘অন্বীক্ষা’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ছিল অত্যন্ত আর্কষণীয় ও নতুনত্বের স্বাদে ভরপুর। অনুষ্ঠানের শুভ সুচনা করে রমাপ্রসন্ন দত্ত। প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুশান্ত গুহ এবং ডাঃ মদনমোহন সাহা। সভাপতির আসন অলংকৃত করেছিলেন ডুয়ার্সের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, কবি ও সাহিত্যনুরাগী তথা বানারহাট হাইস্কুলের শিক্ষক সুনীল চক্রবর্তী মহোদয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া সমাজ সচেতনতায় ছাত্র সমাজ বিষয়ক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় সফল ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কার প্রদানের মধ্যেই উদ্বোধনী পর্বের সমাপ্তি ঘটে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হয় পারস্পারিক ভিন্নধর্মী তিন অধ্যায়ের কোলাজ সন্ধ্যা। এ পর্যায়ে প্রথমেই অনুষ্ঠিত হয় ‘কণ্ঠশ্বর’ পরিবেশিত দুটি শ্রুতি নাটক যথাক্রমে ‘যদি এমন হতো’ ও ‘বিস্ফোরণ’। তরুন চক্রবর্তী রচিত প্রথম নাটকটির বিষয়বস্তু ছিল ‘পরাধীন ভারতবর্ষ -নেতাজী-স্বার্থান্বেষী মানুষ’ বিষয়ক একটি রচনা। বক্তব্য প্রধান এই রচনাটি শ্রুতি নাটকের আকর্ষণ থেকে দর্শক শ্রোতাদের নিরাশ করলেও রবীন্দ্র ভট্টাচার্য রচিত ও নির্মল দে নির্দেশিত ‘বিস্ফোরণ’ শীর্ষক দ্বিতীয় নাটক শ্রোতাদের মন জয় করেছেন সহজেই। আণবিক বিস্ফোরণের পক্ষ ও বিপক্ষে স্বামী-স্ত্রীর আপেক্ষিক দ্বন্দ্ব নিয়ে রচিত এই শ্রুতি নাটকটির গভীরতাও ছিল অরুণ চক্রবর্তী, শুভ্রা নিয়োগী, প্রতীতি ভট্টাচার্য, রমেন দত্ত ও নির্মল দে।
কোলাজ সন্ধ্যায় দ্বিতীয় অনুষ্ঠান ছিল ছায়াপুতুল নাটক। সাধারণত যে ধরনের পুতুল নাচ দেখে আমরা অভ্যস্ত এটি তার চেয়ে ভিন্ন স্বাদের। পিজবোর্ড দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি পুতুলগুলি দুটি কাঠির সাহায্যে পরিচালনা করা হয় দক্ষতার সাথে। ফোকাসের সাহায্যে সেই ছবি গিয়ে পড়ে পর্দার পেছনে। দর্শকগণ সেই প্রতিছবিই প্রত্যক্ষ করে আনন্দ উপভোগ করে। ছায়াপুতুল নাটকের ইংরেজি নাম ‘শ্যাডো-পাপেট-শো’ হিসেবেই পরিচিত। আনন্দম সংস্থার মাধ্যমে পরপর দুটি রচনা যথাক্রমে অতি লোভে তাতি নষ্ট ও সার্কাস প্রদর্শিত হয়ে উপস্থিত ছোটরাতো বটেই বড়রাও নতুন স্বাদে আত্মস্থ হয়।
কোলাজ সন্ধ্যায় তৃতীয় ও শেষ আকর্ষণ ছিল ডিয়ার পরিবেশিত মহাকাশ দর্শন। বানারহাটে অবস্থিত ‘ডুয়ার্স এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট রিভিইল’ (ডিয়ার) সংস্থার প্রাণপুরুষ ডঃ পার্থপ্রতিম সহকারী প্রশান্ত মুখার্জীকে সাথে নিয়ে প্রোজেকশন যন্ত্রের সাহায্যে মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রদের বিষয়ে আকর্ষণীয় ও মূল্যবান দৃশ্য প্রদর্শনের সাথে সাথে তার ব্যাখ্যামূলক ধারাভাষ্যও সকলকে মুগ্ধ করে। অনেক অভিভাবককেই ‘শো’ শেষে বলতে শোনা যায় মহাকাশকে আজ নতুন করে প্রত্যক্ষ করলাম ও নতুন ভাবেই জানলাম। এমন শিক্ষামূলক ও আকর্ষণীয় ‘শো’ সর্বত্রই হওয়া বাঞ্জনীয়। ছায়ানীড়ের কোলাজ সন্ধ্যা যে গতানুগতিকতার বাইরে এক নতুন আকর্ষণীয় সংযোজন; একথা বলার আর অবকাশ রাখে না।