বাঁ পায়ে অস্থিসন্ধিই ছিল না

বাঁ পায়ে অস্থিসন্ধিই ছিল না

বাঁ পায়ে অস্থিসন্ধিই ছিল না;  ১৮ নভেম্বর ২০০৬ শনিবাসর;উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
থাইবোন তথা ঊর্বস্থি সরাসরি জুড়ে গিয়েছিল কোমরের হাড় তথা ফিমারের সঙ্গে। ২৫ বছরের মেয়ে গত ১৩ বছর ধরে হাঁটাচলার একটা নিজস্ব কেতা তৈরি করে নিয়েছিল নিজের মতো করে। বাইরে থেকে সেভাবে বোঝার উপায় ছিল না ঠিকই, কিন্তু নেহা অন্যদের মতো গুরদোয়ারায় হাঁটুভাঁজ করে বসতে পারত না, উবু হয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। নির্দিষ্ট দিকে কাত হয়ে শোওয়া বা চিৎ হয়ে শোওয়া ছাড়া অন্যদের মতো স্বাধীনভাবে শোওয়ার অবস্থা ছিল না তাঁর। ১২ বছর বয়সে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিল নেহা, তখন থেকেই দুই অঙ্গের হাড় জুড়ে গিয়েছেল। মেঝেয় বসতে পারত না। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও পারত না। সেই থেকে মর্মাঘাতজনিত পীড়ায় নেহার কতটা যে করুন দশা হয়েছিল তা বলার নয়। এর মধ্যে নেহার বিয়েও ঠিক করে ফেলা হয়। পায়ের ত্রুটি ঢাকতে সে বিয়েতে লেহেঙ্গা পরবে, স্বজনদের মধ্যে আলোচনায় সেরকমই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। নেহা জানাচ্ছেন, লেহেঙ্গা পরে পায়ের এই অসুস্থতা ঢাকতে হবে জানার পর বাকি জীবন কীভাবে কাটাব তা ভেবে সারারাত কেঁদে ভাসিয়েছিলাম।
    দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের অস্থি শল্যবিদ ও এন নাগি নেহার বাঁ পায়ের ননএকজিসটেন্ট হিপ জয়েন্ট অবস্থাটি শনাক্ত করেন। দেখেন নিতম্বের হাড়ের সঙ্গে কোমরের হাড়ের মাঝখানে অস্থিসন্ধি তথা জোড় যেটা থাকার কথা তা নেই! ডা. নাগির কথায়, সচরাচর এরকম হয় না। শিশুবেলায় কোনো কারণে সংক্রমণ ঘটে গিয়ে এরকম হয়েছিল, তারপর পড়েটড়ে গিয়ে আরো জটিল হয় পরিস্থিতি। ডা. নেগি জানাচ্ছেন, প্রথমে ইলিয়াম, ইসকিয়াম, পিউবিস এই ধরণের হাড় থেকে খিলনাকৃতির অ্যাসিটাবুলাম নতুন করে গড়ে নিই। দেশে এভাবে অ্যাসিটাবুলাম তৈরি করে নেওয়া এই প্রথম। অ্যাসিটাবুলাম তৈরি করলেই তো হল না, সেটির গড়ন ডানদিকের পায়েরটির সঙ্গে মেলা চাই। তারপর মেটাল অন মেটাল টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি। মানে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন। হিপ জয়েন্টের বল এবং সকেটকে এমনভাবে সংস্থাপন করতে হয়েছে, যাতে স্বাভাবিক নাড়াচাড়া করতে নেহার যেন কোনোরকম ভোগান্তি না হয়। যে পদ্ধতিতে এই অস্ত্রোপচার হয়েছে, ডাক্তারী পরিভাষায় তা অ্যানটার-ল্যাটারাল মিনিম্যালি ইনভ্যাসিভ প্রোসিডিওর। খেয়াল রাখতে হয়েছে, দুটো পা সমান না হলে তো ওকে নেংচে নেংচে হাঁটতে হতে পারে। তিন সপ্তাহ বাদে স্বাভাবিক পূর্ণাঙ্গ মানুষের মতো হাঁটাচলা শোওয়া বসা ফিরে পেয়ে নেহা হাউ হাউ করে কেঁদে উঠছেন, আনন্দে। জানিয়েছেন, ডা. নাগি যখন বলেছিলেন, ঠিক হয়ে যাব, স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারব, তখন বিশ্বাস করতে পারিনি।

জন্মেই বয়স ১৩
জন্মাতেই বয়স ১৩! বিজ্ঞানের অবদান। সে ১৯৯৩ সালের কথা। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এক দম্পতির শুক্রাণু, ডিম্বাণু নিষিক্ত করে কয়েকটি ভ্রুণ বানিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ফ্রিজে। মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের ইন্সটিটিউটো মারকিউস ক্লিনিকের সেই ভ্রুণের একটি এক মহিলার গর্ভে প্রতিস্থাপনের পর তা থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে ৯ মাস বাদে। এর আগে বার্সিলোনার একটি ক্লিনিকে ১২ বছর এভাবে রাখা ভ্রুণ থেকে সন্তানের জন্ম হয়েছিল। যাঁদের শুক্রাণু, ডিম্বাণু থেকে এই ভ্রুণগুলি তৈরি, তাঁদেরও সন্তান মিলেছিল, একইভাবে ভ্রুণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে।

Join our mailing list Never miss an update