আকাশেতে দেহ মেলে কেমনে ঘুড়ি ওড়ে? ডাঃ পার্থপ্রতিম। ১৬ সেন্টেম্বর, ১৯৯৯সোমবার; দৈনিক বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত
সুনীল আকাশে পাখির আনাগোনা দেখে শূন্যে পাড়ি জমাবার সাধ জেগে-ছিল এক কৌতুহলী মানবের মনে, সে চাইলো তাঁর সৃষ্টিকে সীমাহীন গগনের বুকে মেলে দিতে। তাঁর বলাকা মনের স্বপ্ন বাস্তবতার পরশে রূপ নিলো ঘুড়ির ..... আমাদের কবি বন্ধুরা ঘুড়ির প্রচলন নিয়ে হয়তো এমনি একটি গল্পো শোনাবে। সে সত্যি-মিথ্যে যাই হোক। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বলেন খৃষ্টের জন্মের এক হাজার বছর আগে চীন দেশে প্রথম ঘুড়ি ওড়ানো হয়। তারপর ৫০০ সালে পূর্বদিকে জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, ইন্দো-নেশিয়া প্রভৃতি প্রশান্ত মহাসাগরীর দ্বীপগুলিতে ও পশ্চিম দিকের আরবীয় দেশে ঘুড়ি ওড়ানো চালু হয়। ইউরোপে প্রথম ঘুড়ি পৌঁছায় ১৩১৪ সালে এক ডাচ বণিকের মাধ্যমে। অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুড়ি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বক্সঘুড়ি, ঢাউস, মাছঘুড়ি, পতঙ্গঘুড়ি হরেক রকম ঘুরি থাকলেও আমাদের দেশে চৌকো ঘুড়িই সবচেয়ে জনপ্রিয়। ইংরেজি পরিভাষায় একে বলে ডায়মন্ডসেপড কাইট। এই ঘুড়িগুলি দ্বিমাত্রিক, ওড়ার সময় মাথাটি সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে। সুতোর টানের জন্য পিছন অপেক্ষা সামনের বাতাসে বেশ চাপ দেয়। এই চাপের ব্যবধানের জন্য যে রেজাল্ট টেন্ট ফোর্স বা লব্ধি বলের সৃষ্টি হয় সেটাই ঘুড়িকে ওপরে উঠতে সাহায্য করে। সুতোর টান যত বাড়ানো হবে ঘুড়ি ততই তার সামনের বাতাসে চাপ দেবে ফলে ঘুড়ি ওপরে উঠবে। এই কারণেই লাঠাইতে সুতো গোটালে ঘুড়ি উঁচুতে উঠতে থাকে। ঘুড়ির সুতো বাধা বা ফল বাধাঁ সঠিক হওয়া দরকার। ঘুড়ির ওজন ও বাতাসের সঙ্গে অক্ষের সংঘাত কোণের সামঞ্জস্য এলেই ঘুড়ি তরতর করে উঠে যাবে। ঘুড়ির ভার বা ওজন মধ্যাকর্ষণের কারণে নিচের দিকে সক্রিয় থাকে। অক্ষের দু’পাশের ওজন সমান না হলে ওড়ার সময় ঘুড়ি ঘুড়তে থাকে। চলতি কথায় একে বলে গোত্তা খাওয়া। ঘুড়ির অক্ষ মাঝ বরাবর না হলে সঠিকভাবে আকাশে ওড়ে না। অনেক সময় ঘুড়ির সঙ্গে কাগজের লেজ লাগিয়ে ঘুড়িকে ঠিক করা হয়।