লঙ্কা খেলে ঘুম ভালো হয়, হার্ট চাঙ্গা থাকে

লঙ্কা খেলে ঘুম ভালো হয়, হার্ট চাঙ্গা থাকে

লঙ্কা খেলে ঘুম ভালো হয়, হার্ট চাঙ্গা থাকে; ডাঃ পার্থপ্রতিম। ২৬ ডিসেম্বর ২০০৯; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত

লঙ্কা খেলে ভালো ঘুম হয়। জানিয়েছেন ইউনির্ভাসিটি অফ তাসমানিয়ার গবেষকরা। লনসেস্টেনে ১৮ মাস ধরে মানুষের উপর লঙ্কার ঘুম উন্নতিকারক গুণ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তাঁরা। দিনে ১৫ গ্রাম করে লঙ্কা খাইয়ে এই ফল পাওয়া গিয়েছে। লঙ্কার প্রভাবে ঘুম যখন ভালো হয়, তখন হার্টও চাঙ্গা খাকে।
    লঙ্কা রক্তে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড অর্থাৎ সব ধরনের বাজে চর্বির পরিমাণ কমায়। লঙ্কা পাকস্থলিতে ক্যানসার হওয়া আটকায়। লঙ্কা ডায়াবেটিকদের জন্য উপকারী। লঙ্কা ভালো ঘুম উপহার দিতে পারে, সাইনাসের নাকবদ্ধতা খুলে দিতে পারে। কাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে লঙ্কা শরীরে তাপ বৃদ্ধি ঘটাতে থাকে। অক্সিজেন আত্মীকরণের গতিও বাড়িয়ে তোলে। লঙ্কা খেলে অতিরিক্ত ক্যালোরি তথা চর্বি পোড়ে। মুটিয়ে যেতে থাকা এবং মুটিয়ে যাওয়াদের জন্য লঙ্কা তাই খুবই উপকারী। লঙ্কা মেশানো খাবার শরীর দ্রুত আত্মস্থ করতে পারে, কারণ হজমপ্রাণালীকে উদ্দীপিত করার মতো উপাদান রয়েছে লঙ্কায়। ফুসফুসে জমে থাকা কফ-শ্লেষ্মা তাড়াতে পারে লঙ্কা। হার্টে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে তোলে। অণুচক্রিকার ধ্বংস রোধ করে রক্তের তঞ্চন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। রক্তবহা নলিগুলোর সম্প্রসারণশীলতা বাড়িয়ে দিয়ে হাই ব্লাড প্রেসারের আধিক্য হ্রাস করে। লঙ্কা খিদেও বাড়ায়। রুমাটইড আর্থ্রাইটিসের প্রদাহ উপশম করে। লঙ্কা অবসাদরোধী। লঙ্কা যত বেশি ঝাল, তত উপকার। তাকণ, উপকারটা করে থাকে লঙ্কা নামক ফলের ডগা থেকে বীজাধারের গায়ে সেঁটে থাকা প্ল্যাসেনটা তথা গর্ভনাড়ি সঞ্জাত ক্যাপসায়কিন নামক যৌগ। লঙ্কার ঝাঁঝ কম, বেশি হয় এই ক্যাপসায়কিন যৌগটির পরিমাণের উপর। লঙ্কার ক্যাপসায়কিন গলার সংক্রমণ ঘটতে দেয় না। এজন্য লতা মঙ্গেশকর মুম্বইয়ে থাকলে কাঁচা কোলাপুরি লঙ্কা খান, বাইরে গেলে সঙ্গে থাকে লঙ্কার গুঁড়ো। খাবারে মিশিয়ে খান।
 

   ২০০৬ সালের জুলাই সংখ্যার আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশনে অস্ট্রেলীয় গবেষকরা জানিয়েছেন, খাবারে নিয়মিত লঙ্কা খেলে ইনসুলিনের চাহিদা অনেকটাই কমে যায়। তাই টাইপ টু ডায়াবেটিসে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের খাবারদাবারে লঙ্কা থাকা উপকারী। লঙ্কার মাধ্যমে রক্তে সুগারের মাত্রা হ্রাস পেয়ে থাকে। ক্যাপসায়কিন ছাড়াও লঙ্কায় থাকা ভিটামিন সি, খাদ্যআঁশ, ক্যারোটিনয়েড তথা ভিটামিন এ এক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়ে থাকে। লঙ্কাতে প্রচুর খাদ্যআঁশ থাকে। লঙ্কা খেলে পাকস্থলিতে ক্যানসার হয় ধারণাটা ভুল। ঘটনা হল লঙ্কা পাকস্থলিতে আলসার তথা ঘা হওয়া আটকায়। ঘায়ের বাড়বৃদ্ধি রোধ করে। পাকস্থলির প্রাচীরকে সুরক্ষা দেয়, পাকস্থলির কোষকলাকে পুননির্মাণ করে। তবে এটা ঠিক প্রচুর পরিমাণে লঙ্কা খেলে পাকস্থলির ক্ষতি হবে। যে কোনো জিনিসই নিয়মিত বেশি খেলে শরীরের কোন না কোনো ক্ষতি হয়। অন্যদিকে, ইউনির্ভাসিটি অফ নটিংহামের গবেষকদের দাবি, ক্যানসার ছড়ায় যে টিউমার কোষ, লঙ্কায় থাকা ক্যাপসিয়ান তাদের ভাতে মারে।
    বেঁচে থাকার জন্য যে উৎস থেকে শক্তি পাচ্ছিল ওরা, সেই উৎসকে সরাসরি আক্রমণ করে ক্যাপসায়কিন। এই গবেষক দলের প্রধান ডা. টিমেথি বেটস-এ বক্তব্য, ক্যানসার আক্রান্তদের খাবার-দাবারে অবশ্যই লঙ্কা থাকা উচিত, ক্যানসার রোগীরা তাতে ব্যাপক উপকৃত হবেন। ধূমপান করেন যাঁরা, তাঁদেরও নিয়মিত লঙ্কা খাওয়া উচিত, কেন-না ফুসফুসে ক্যানসার হওয়া আটকানোরও ক্ষমতা আছে লঙ্কায়।

Join our mailing list Never miss an update