হৃদয়ের কথা পর্ব-৪৩; ধূমপান ও হৃদরোগ
বিশেষত ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে ক্রমবর্ধমান হৃদরোগের অন্যতম কারণ সিগারেট, বিড়ি, চুরুটের বিষাক্ত পদার্থ। সত্যি কথা বলতে গেলে ধূমপানের সময় ধোঁয়ার সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রায় চার হাজার তিনশ ছত্রিশটি সক্রিয় রাসায়নিক উপাদান প্রবেশ করে। তবে মূলত নিকোটিন, কার্বন মনোঅক্সাইড ও টারবস্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে
কার্বন মনোঅক্সাইড রক্তের কার্বোক্সিহিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ভীষনভাবে বাড়িয়ে দেয়। কার্বোক্সিহিমোগ্লোবিন রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে অল্পেতেই হাঁপ ধরে। হৃদপেশিতে অক্সিজেনের অভাব থেকে অ্যানজাইনা পেক্টোরিস দেখা দিতে পারে। দেহকোষে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করার জন্য হৃৎপিন্ডকে দ্রুত লয়ে রক্ত পাম্প করতে হয়। এই বাড়তি চাপ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে।
কার্বন মনোঅক্সাইড এবং নিকোটিন ধমনীর ভেতরে থাকা এন্ডোথেলিয়াম স্তরের ওপর বিষক্রিয়া করে। এর ফলে সহজেই ধমনীর দেওয়ালে কোলেস্টেরল ও ফ্যাট জমে আথেরোসক্লেরোসিস হয়। নিকোটিনের প্রভাবে রক্তে থাকা হার্টের বন্ধু হাইডেনসিটি লাইপো-প্রোটিনের মাত্রা কমে যায়। এছাড়াও নিকোটিন ধমনীর মধ্যে অহেতুক আক্ষেপ ((Spasm) বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে করোনারি ধমনীতে রক্ত চলাচলের রাস্তা সরু হয়ে গিয়ে রক্তচাপ বেড়ে যায়। রক্তচাপ বাড়লে বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা।
বিড়ি, সিগারেট, চুরুট প্রভৃতির ধোঁয়ার মধ্যে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে রক্ত জমাট বাধাঁর প্রবণতা বেড়ে যায়। ধূমপানের পর রক্তরস বা প্লাজমার ভেতরে থাকা ফাইব্রিনোজেন (Fibrinogen) প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ে। ফাইব্রিনোজেন রক্ততঞ্চনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এ থেকে হয় সেরিব্রাল বা কারোনারি থ্রম্বোসিস।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের হিসাব অনুযায়ী ভারতে প্রতিবছর প্রায় আট লক্ষ মানুষ ধূমপানের কুপ্রভাবে মারা যান। সমীক্ষা থেকে জানা গেছে ধূমপায়ীদের হার্টের অসুখের সম্ভাবনা অধূমপায়ীদের চেয়ে ৬ গুন বেশি। যারা ধূমপায়ীদের কাছাকাছি থাকেন তাদের ক্ষেত্রে ‘প্যাসিভ স্মোকিং’ হার্টের অসুখের ক্ষেত্রে একই ভূমিকা পালন করে। ধূমপানের ফলে প্রত্যক্ষভাবে ফুসফুসে রোগ সৃষ্টি হয়ে, হৃদযন্ত্রের কাজের ব্যাঘাত ঘটায়।
যারা দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে ধূমপান করছেন তারা যদি চার বছর ধূমপান বন্ধ রাখেন, তবে নন স্মোকারদের মতোই উপকার পাবেন। যারা ধূমপান এখনও পুরোপুরি ছেড়ে দিতে পারে নি, সেই সব জ্ঞানপাপীরা ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রভাব রুখতে বেশি পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস বিশেষত ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত ফল ও শাক-সবজি খাবেন।