হৃদয়ের কথা পর্ব-৪২; হৃদরোগীর মদ্যপান

হৃদয়ের কথা পর্ব-৪২; হৃদরোগীর মদ্যপান

হৃদয়ের কথা পর্ব-৪২; হৃদরোগীর মদ্যপান
    এ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে মোটামুটিভাবে বলা যায় পরিমিত মদ্যপান হৎপেশিকে ভালো রাখে। অ্যালকোহল রক্তে হাইডেনসিটি লাইপো প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে হার্টকে সুরক্ষা দেয়। অন্যদিকে অ্যালকোহল স্নায়ুতন্ত্রের কাজটা শিথিল করে বলে ঘুম ভালো হয়। তবে কোনো অবস্থাতেই দু’পেগ-এর বেশি মদ্যপান করবেন না। অ্যালকোহলে শক্তির পরিমাণ বা টিসুক্যালোরি বেশি থাকে, তাই মদ খেলে দেহে অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রবেশ করে। যা অনেক সময় মেদ বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পশ্চিম দেশগুলিতে দেখা যাচ্ছে, তুলনামূলকভাবে শনি-রবিবার বেশি হার্ট অ্যাটাক হয়। এই ঘটনার এখন নামকরণ হয়েছে ‘উইক এন্ড হার্ট অ্যাটাক’। সপ্তাহের কাজের শেষে আকণ্ঠ মদ্যপান এই ‘উইক এন্ড হার্ট অ্যাটাক’-এর কারণ। বেশি পরিমাণ মদ খেল ব্লাডপ্রেসার ও হৃদস্পন্দনের হার দুটিই বেড়ে যায়। এই দুই-এ মিলে আচমকা হৃৎপিন্ডকে স্তব্ধ করে দিতে পারে। মদ বিভিন্ন রকমের হুইস্কি, ব্যান্ডি, বিয়ার, স্যামপেন... আরো কত কী। তবে যাদের হৃদরোগ বা উচ্চরক্তচাপ আছে তারা যদি একান্তই মদ খেতে চান তবে রাম (Rum) খেতে পারেন।
    যারা শতচেষ্টা করেও মদ্যপানের বদঅভ্যাস ত্যাগ করতে পারছেন না। তাদের কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে হবে-
ক). সূর্যাস্তের আগে কখনই মদ্যপান করবেন না।
খ). বিয়ার ও  ওয়াইনে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের বিয়ার ও ওয়াইন এড়িয়ে চলাই ভালো।
গ). প্রতি পেগ হুইস্কি বা রামের সাথে দেড়শোথেকে দু’শো মিলিলিটার জল বা প্লেন সোডা মেশান। কোলা বা কোন কোলড্রিংক্স মেশাবেন না।
ঘ). যাদের পকেট পারমিট করে না। যারা বাংলা মদ খান। তারা বাংলার সাথে ডাবের জল মেশাতে পারেন। ডাবের জলে বেশকিছু অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস্ রয়েছে যা আপনার হৃদ্রোগ ও অন্য কিছু অসুখকে প্রতিহত করে।
ঙ). বন্ধু-বান্ধবের সামনে কেতা নেওয়ার জন্য ঢকঢক করে মদ খাবেন না। ধীরে ধীরে আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে মদ্যপান করুন। প্রতিপেগ শেষ করতে ২৫-৩০ মিনিট সময় নিন।
চ). হার্টের রোগীদের পানের টেবিলে বেশি ভাজাভুজি, ফল, মাংস এসব খাওয়া কখনই উচিত নয়। সেঁকা পাঁপড়, মুড়ি, টোস্ট এসব অল্পসল্প খেতে পারেন।
ছ). হার্টের রোগীরা খালিপেটে কখনই মদ গিলতে যাবেন না। মদ খাওয়ার অন্তত আধা ঘন্টা আগে চিড়ে, মুড়ি, টোস্ট এই জাতীয় তেলহীন খাবার দিয়ে হাল্কা টিফিন করবেন।
জ). সবসময় খেয়াল রাখবেন মাত্রা যেন কখনই দু’ পেগের ওপরে না ওঠে। মদ্যপায়ীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা বেশীর ভাগ সময়ই দলবেঁধে বা বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়ে মদ গিলেন। তাই হার্টের রোগীদের একটু সতর্ক থাকতে হবে বিশেষত সন্ধ্যার পর মদ্যপ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গ এড়িয়ে চলুন। তাহলে আপনার আর সঙ্গদোষে শরীর নষ্ট হবে না।
    মদ্যপানের বিষয়ে একটি মজার ব্যাপার আছে-যাকে বলে ‘ফ্রেঞ্চ প্যারাডক্স’। ফরাসিরা মাখন, চিজ, পনির এসব যেমন প্রচুর খান, সেই সঙ্গে অতিমাত্রায় সুরাপানে তারা অভ্যস্ত। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সেই অনুপাতে তাদের মধ্যে হৃদরোগের ঘটনা দেখা যায় না। এই রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ফ্রান্সের লোকেরা সাধারণত রেড ওয়াইন খান। যা কী না দ্রাক্ষা বা আঙ্গুর থেকে তৈরি। আর জাদুকাঠিটি লুকিয়ে আছে ঐ আঙ্গুরের খোসার ভেতরে থাকা রেসভেরাট্রল জৈব যৌগে। এই রেসভেরাট্রল রক্তের এইচ.ডি.এল. বাড়িয়ে দেয় ও এল.ডি.এল. কমিয়ে দেয় ও এভাবে রক্ষা করে হৃদয়কে। এত গেল ধনী সাহেবদের পানপেয়ালার কথা। এদেশের বিপিনবাবুর কারণসুধা প্রকৃত সুধা নয়, এ জীবনকে বিষময় করে তোলে।

Join our mailing list Never miss an update