হৃদয়ের কথা পর্ব-৪০; হৃদরোগীর খাবার-দাবার

হৃদয়ের কথা পর্ব-৪০; হৃদরোগীর খাবার-দাবার

হৃদয়ের কথা পর্ব-৪০; হৃদরোগীর খাবার-দাবার; ডাঃপার্থপ্রতিম।
    শুধু প্রাণরক্ষা নয়, হৃদয়কে নীরোগ ও সাবলীল রাখতে খাদ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যারা হৃদয়ের ওপর আসা ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটকে প্রতিহত করতে চান, তাদের সুষম সঠিক খাবারের প্রতি সবার আগে দৃষ্টি দিতে হবে। খাদ্যের মধ্যে দিয়ে ছয়টি প্রধান পুষ্টি উপাদান আমাদের দেহে সরবরাহিত হয়। এগুলি হলো- প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও জল। এই উপাদানগুলি পরিমাণ মতো শরীরে না গেলেই দেখা দেয় বিপত্তি।
   
হৃদরোগ এড়াতে কী কী খাবেন না-
    রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে তা করোনারি ধমনীর ভেতর অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাঁঠা-খাসির মাংস, বয়লার মুরগি, গো-মাংস (Beef), শূকরের মাংস (Pork) অর্থাৎ এসব রেডমিট খেলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল বাড়তে থাকে। যাদের বয়স চল্লিশ বছরের কম তারা মাসে দু’একদিন রেডমিট খেতে পারেন। তবে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি ২০০ মিগ্রা/১০০ মিলি’র বেশি থাকে তখন রেডমিট খাওয়া একদম বদ্ধ। পরিবারের যদি হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকে তবে ৪০ বছর পর রেডমিট না খাওয়াই ভালো।
    চকোলেট, রসগোল্লা, সন্দেশ, কোল্ড ড্রিংকস এসবেতে অন্য খাদ্যের তুলনায় শক্তিমূল্য বা ক্যালোরি বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত ক্যালোরিতে ওজন বাড়তে পারে। বাড়তি ওজন হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ।
    ৪০ পেরিয়ে যাওয়া একজন মানুষের প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ফ্যাটই যথেষ্ট। এই পরিমাণ ফ্যাট আমরা রোজকার খাবার যেমন-ডাল, মাছ, রান্নার তেল ইত্যাদির মধ্যেই পেয়ে যাই। সে কারণে ঘি, মাখন, চিজ এসব খাওয়ার তেমন কোন প্রয়োজন নেই। দেহে বাড়তি ফ্যাটের ঝামেলা এড়াতে ক্রিম বিস্কুট, পেস্ট্রি, আইসক্রিম এসব থেকে দূরে থাকুন। একই কারণে রুই, কাতলা, বোয়াল এসব বড়ো মাছ খাবেন না।
    একটি ডিমের কুসুমে ২০০-২৫০ মিগ্রা কোলেস্টেরল থাকে। তাই যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তারা ডিম খাবেন না। আর একান্তই যদি খেতে হয় তবে কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশটি খাবেন।
    বর্তমানে আধুনিক ব্যস্ত জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসেছে ফাস্ট ফুড। রোল, চাউমিন, কাটলেট, ফিসফ্রাই এসবের মাধ্যমে শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট ঢুকে যায়। তাছাড়া ভাজাভুজি বেশি খেলে অম্বল-গ্যাস এসব হতে পারে। হৃদরোগীর পক্ষে গ্যাস-অম্বল খুবই মারাত্মক।
    নিজের হৃদয়কে সুস্থ-সবল রাখার ভাবনা মাথায় থাকলে হোটেল-রেস্তরাঁর খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষত যেখানে অনেক লোকের রান্না একসঙ্গে হয় সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না করা সম্ভব নয়। তাছাড়া বাইরেটা ঝকঝকে হলেও এদের হেঁসেল সাধারণত অপরিষ্কার। এখানে খাদ্যের পুষ্টিমূল্যের চেয়ে স্বাদের দিকেই বেশি নজর দেওয়া হয়।
    একই তেল বারবার ব্যবহার করলে খাবারে অক্সিডেটিড অ্যাসিডিটি বেড়ে যায়, যা পাকস্থলী ও লিভারে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। তেলেভাজার দোকানগুলিতে একই তেল দিনের পর দিন ব্যবহার করা হয়। এ কারণে রেস্তরাঁর খাবারগুলি বেশি সুস্বাদু হয়।  তবে জিভকে বেশি আস্কারা দিলে আপনার হৃদয় ভারাক্রান্ত হবে।
    হৃদরোগীর যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে খাদ্যের বিষয়ে সাবধান হতে হবে। রসগোল্লা, সন্দেশ, সবরকম মিষ্টি, আলু, জ্যাম-জেলি এসব একদম বন্ধ। ভাতও অল্প পরিমাণে খাবেন। সিরাপ মিষ্টি শরবত এমন কী মধু রক্তশর্করা বাড়াতে পারে।
    ব্লাডপ্রেসার বেশি থাকলে পরিমিত লবণ খাবেন। সস্, আচার এসব এড়িয়ে চলুন। এসবেতে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে যা রক্তচাপ বাড়ায়।

হৃদরোগ এড়াতে কী কী খাবেন-
    টুনা-সলমোন, ম্যাকরেল, কালো পমফ্রেট, ট্রন্ট প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছ, আমাদের দেশের ইলিশ মাছ, ছোটো মাছ এসব খাওয়া ভালো। সামুদ্রিক মাছে ওমেগা থ্রি নামের যে ফ্যাটি অ্যাসিড আছে তা হার্টের রক্ষাকবচের কাজ করে।
    ছোটো দেশি মুরগি, সয়াবিন, মোটা তোলা দুধ, বাড়িতে পাতা টক দই, ছানা খেতে পারেন।
    চিনি ছাড়া টক দই-এর লস্যি, কমলা বা শরবতীলেবুর রস।
    কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে হৃদরোগীকে দৃষ্টি দিতে হবে। সে কারণে ভুসিযুক্ত আটার রুটি, গাজর, সবুজ শাকপাতা, টম্যাটো তন্তুময় বা ফাইবারযুক্ত সবজি বিভিন্ন ধরনের ফল।
    মুড়ি, চিড়ে, সেঁকা পাঁউরুটি, ক্রিম ক্যাকার, মেরি বা থিন অ্যারারুট এসব বিষ্কুট।
    ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর আর্থিক সহায়তায় আগ্রার এস.এন.মেডিক্যাল কলেজের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ছোলার ডাল হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে পারে। ছোলার ডাল খেলে রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যায়। এ কারণে কমে যায় করোনারি ধমনীতে অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের সম্ভাবনা।
    আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত একদল গবেষক ৫৫২ জন ডাচ্-এর ওপর পরীক্ষা করে দেখেছেন লিকার-চা ও আপেল সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস-এর সম্ভাবনা কমায়। চা ও আপেল থাকা ফ্লাভোনয়েডস্ (Flavonoids) ধমনীর ভেতর রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না ও এটি অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস হিসাবেও কাজ করে।

Join our mailing list Never miss an update