হৃদয়ের কথা পর্ব-৩৫; ফুসফুস থেকে হার্টে

হৃদয়ের কথা পর্ব-৩৫; ফুসফুস থেকে হার্টে

হৃদয়ের কথা পর্ব-৩৫; ফুসফুস থেকে হার্টে; ডাঃ পার্থপ্রতিম।
আমাদের হৃৎপিন্ড থাকে দুটি ফুসফুসের মাঝে। হদযন্ত্র থেকে রক্ত ফুসফুসীয় ধমনীর মধ্য দিয়ে ফুসফুসে যায়। সেখানে গিয়ে রক্ত থেকে বেরিয়ে যায় কার্বন-ডাই অক্সাইড ও রক্তে ঢোকে বেশি পরিমান অক্সিজেন। অক্সিজেন ভরা রক্ত আবার ফুসফুসীয় শিরার মধ্য দিয়ে ফিরে আসে হৃৎপিন্ডে। তারপর বাম অলিন্দ নিলয় হয়ে রক্ত সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এসব কারণেই ফুসফুসের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ট। ফুসফুসে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধলে পরবর্তীকালে তা আক্রান্ত করে তোলে আমাদের কোমল হৃদয়কে। ডাক্তারি পরিভাষায় হৃদযন্ত্রের এই রোগকে বলে ‘করপালমোনেলি’(Corpulmonale)।
ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস (Chronic Bronchitis), ফুসফুসের বায়ুথলিগুলি বড়ো হয়ে যাওয়া বা এম্ফাইসিমা (Emphysema), ব্রঙ্কিয়াল হাঁপানি (Bronchial Asthama), ফুসফুস ছোবড়ার মতো হয়ে যাওয়া বা ফাইব্রোসিস (Fibrosis), যক্ষা (Phthisis), সারকয়েডোসিস (Ssrcoidosis)-ফুসফুসের এইসব বিভিন্ন রোগ থেকে পরবর্তীকালে হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হয়।
    করপালমোনেলি ব্যাধিতে রোগীর জিভ, আঙুল, কানের লতি, নাকের ডগা নীলচে হয়ে যায়। নাড়ীর গতি বা হৃৎস্পন্দনের হার অনেক বৃদ্ধি পায়, পায়ের বিভিন্ন জায়গা ফুলে ওঠে, নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়। ভোরের দিকে খুব কাশি হয়; সঙ্গে থাকে সোঁ সোঁ শব্দ। এ ধরনের রোগীর বারবার জ্বর আসে। এছাড়াও আরো কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
    বুকের ছাতির এক্স-রে, ই.সি.জি., ফুসফুসের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা পরীক্ষা বা স্পাইরোমেট্রি (Spirometry), ব্লাড গ্যাস এনালাইসিস বা রক্তের গ্যাস বিশ্লেষণের সাহায্যে রোগনির্ণয় সম্ভব।
    করপালমোনেলিতে আক্রান্ত রোগীকে প্রথমে ধোঁয়া- ধুলামুক্ত পরিবেশে নিয়ে যেতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে আবহাওয়া যেন শীতপ্রধান না হয়। ফুসফুসের সংক্রমণ রুখতে ডাক্তারবাবুরা সঠিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেন। যে সব রোগীর পা ফুলে গেছে তাদের প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ (Diuretic) দিতে হয়। অ্যামাইনোফাইলিন (Amino-phylline), সালবুটামল (Sulbutamal), প্রেডনিসোলেন জাতীয় ওষুধ এ রোগের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকারী। অবস্থা সংকটজনক হলে রোগীর জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
    হোমিওপ্যাথিতে এস্পিডোস্পার্মা (Aspidosperma), ইপিকাক (Ipecac), ব্লাটা ওরি (Blatta Ori), ফসফরাস (Phosphorus) প্রভৃতি ওষুধ এ রোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগে।
 
   এই ব্যাধি প্রতিরোধ করতে বিড়ি-সিগারেট খাওয়া তো চলবেই না, যারা ধূমপান করেন তাদের থেকেও দূরে থাকতে হবে। ধুলোময়লায় কাজ করতে হলে নাক-মুখে অবশ্যই কাপড় বাঁধা দরকার। যে সব  মহিলা কাঠ বা কয়লার উনুনে রান্না করেন তাদের জন্য ধোঁয়াহীন চুলোর ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। সম্ভব হলে রান্নাঘরে বাতাস নির্গম পাখা (Exhaust Fan) লাগাতে হবে। আর চাই নিয়মিত ব্যায়াম।

Join our mailing list Never miss an update