হৃদয়ের কথা পর্ব-৩৪; হার্ট ফেল

হৃদয়ের কথা পর্ব-৩৪; হার্ট ফেল

হৃদয়ের কথা পর্ব-৩৪; হার্ট ফেল; ডাঃ পার্থপ্রতিম।
    ব্যাপারটা পরীক্ষার পাশ ফেলের মতো। নির্দিষ্ট নম্বর না পেলেই ফেল। হৃদযন্ত্র থেকে সঠিক পরিমাণে রক্ত বেরিয়ে যেতে না পারলে তাকে বলে হার্ট ফেলিওর (Heart Failure)। আভিধানিকভাবে হার্ট ফেলিওর হলেও হার্ট ফেল নামেই বেশি পরিচিত। ডাক্তারি শাস্ত্রে প্রয়োজনের তুলনায় কার্ডিয়াক আউটপুট কমে যাওয়াকে এ নামে বোঝানো হয়।

    হার্ট ফেলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। হঠাৎ করে কার্ডিয়াক আউটপুট কমে আসতে পারে মায়োকার্ডিয়াক ইনফ্রাকশনের ফলে। এ ধরনের ঘটনাকে বলে অ্যাকিউট হার্ট ফেলিওর Acute Heart Failure)। আবার হৃদযন্ত্রের কপাটিকার ত্রুটিতে হৃৎপিন্ড থেকে রক্ত নির্গমনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। এ রকম অবস্থার নাম ক্রনিক হার্ট ফেলিওর (Chronic Heart Failure)।
লেফ্ট হার্ট ফেলিওর (Left Heart Failure)-হৃদযন্ত্রের বাম নিলয় থেকে রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই হৃৎপিন্ডের বাম অঞ্চল ঠিক মত কাজ না করলে দেখা দেয় বিভিন্ন রকমের বিপত্তি। শ্বাস বন্ধ হওয়া অবস্থা, শোওয়া অবস্থায় শ্বাস কষ্ট (Orthopnoea), রাতে থেকে থেকে শ্বাস কষ্ট (Paroxysmal nocturnal dyspnoea), শ্বাসগ্রহণ করার সময় ফুসফুসে চটচটে শব্দ হয় (Inspiratory crepetation )-আরো কত কী।
রাইট হার্ট ফেলিওর (Right Heart Failure)- ডান নিলয় থেকে রক্ত নির্গমনের হার কমে গেলে তাকে বলে রাইট হার্ট ফেলিওর। এক্ষেত্রে ঘাড়ের কাছের জুগুলার শিরার চাপ বেড়ে যায়, লিভার বড়ো হয়, দেহের বিভিন্ন অংশ ফুলে ওঠে। রোগী যদি হাঁটাচলা করতে থাকে তবে তার গোড়ালিতে শোথ দেখা দেয়। শয্যাশায়ী রোগীর ক্ষেত্রে থাই, ত্রিকাস্থি (Sacrum) ফুলে ওঠে, উদরীও দেখা দিতে পারে। ফুসফুসের ব্যাধি বা করপালমোনেলি, পালমোনারি ভালভ সরু হয়ে যাওয়া (Pulmonary Stenosis), ফুসফুসের ভেতর রক্ত দলা বাঁধা (Pulmonary emboli) প্রভৃতি কারণে রাইট হার্ট ফেলিওর হয়ে থাকে।

    কোনো কোনো সময় হৃৎপিন্ডের উভয় দিকের নিলয় ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। একে বলে বাই ভেন্ট্রিকুলার হার্ট ফেলিওর (Bi ventricular Heart Failure)। ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি, ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ্ এ সব থেকে পরবর্তীকালে এই উপসর্গ দেখা দেয়।

    তীব্রভাবে হার্ট ফেলিওর না হয়েও যদি কোনো কারণে কার্ডিয়াক আউটপুট কমে যায় তবে ক্লান্তি, কাজে অমনোযোগ, জলপানের তুলনায় প্রস্রাব কম হওয়া, প্রস্রাবে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এ ধরনের বেশ কিছু অসুবিধা দেখা দেয়।
    হার্ট ফেলিওর-চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। রোগীর দেহে কিছু অংশে শোথ দেখা দিলে বা প্রস্রাব কমে গেলে দেওয়া হয় ফ্রুসিমাইড (Frusemide), স্পাইরোনোল্যাকটন (Spironolactone), থিয়াজাইড (Thiazide) প্রভৃতি প্রস্রাব হওয়ার ওষুধ (Diuretics)। এর সঙ্গে অবস্থা অনুসারে রক্তনালী স্ফীত করার ওষুধ বা ভ্যাসোডাইলেটর (Vasodilator) প্রয়োগ করা হয়। গ্লিসারিল ট্রাইনাইট্রেট Glyceryl trinitrate), ডোপামাইন (Dopamine) অধিক প্রচলিত ভ্যাসোডাইলেটর। এছাড়াও ক্যাপট্রোপ্রিল (Captropril), এনালাপ্রিল (Enalalpril), লিসিনোপ্রিল (Lisinopril) এসব ওষুধ রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়।
    হোমিওপ্যাথিতে কনভ্যালেরিয়া (Convallaria), নেরিয়ম ওডোরাম (Narium Odorum), ইয়োনাইমস (Euonymus), এডোনিস ভার্ন্যালিস (Adonis Vernalis) এ সব প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
    হার্ট ফেলিওর-এর আরোগ্যের সম্ভাবনা খুব কম। রোগীকে বেশ সাবধানে থাকতে হয়। সমীক্ষা দেখা গেছে, বড়ো ধরনের হার্ট ফেলিওর-এর পর প্রায় ৫০ শতাংশ রোগী দু’বছরের মধ্যেই ভেন্ট্রিকুলার অ্যারিদমিয়া বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশনের ফলে মারা যায়।

Join our mailing list Never miss an update