বিকল্প জ্বালানীর সন্ধানে-

বিকল্প জ্বালানীর সন্ধানে-

দৈনিক বাসুমতী ২৪ আগস্ট ১৯৯২ সোমবার প্রকাশিত

কে, জানে কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জ্বালানীর ভান্ডার অফুরান নয়! ভূতত্ত্ববিদেরা ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে-আগামী শতাব্দীর প্রথম অর্ধেই বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানী ও কাঠের ব্যাপক অভাব দেখা দেবে। এ ছাড়াও কাঠ, কয়লা, গ্যাসোলিন প্রভৃতি ব্যবহারের ফলে উৎপন্ন হয় কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড যা বায়ুমন্ডল ও পরিবেশকে দূষিত করে। সে কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা খুঁজে চলেছেন শক্তির নতুন নতুন উৎস।
    বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে জানা গেছে, হাইড্রোজেন আগামী দিনের জ্বালানী সংকট মোকাবিলার অন্যতম অস্ত্র হতে পারে।
    হাইড্রোজেন দহনের ফলে যে পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়, তা সমান ওজনের গ্যাসোলিন, পেট্রোল, ইলেকট্রিক ব্যাটারি বা অন্য সব প্রচলিত উৎসের চেয়ে অনেক বেশি। তাছাড়া হাইড্রোজেন জ্বলনের ফলে উৎপন্ন হয় জল, যা পরিবেশের একটি অপরিহার্য উপাদান। তাই পরিবেশ দূষণের কোন প্রশ্নই ওঠে না।
    হাইড্রোজেন সরবরাহ ও সঞ্চয়ের সহজ পদ্ধতি বহু আগেই আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু অসুবিধার কারণ ছিল অন্য বিষয়ে; বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন উৎপাদনের কোন বাণিজ্যিক পদ্ধতি বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না। সাধারণভাবে আমরা জানি যে জলের তড়িৎ বিশ্লেষণে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পাওয়া যায়। এই বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রয়োজন হয় সমপ্রবাহ তড়িৎ বা ডাইরেক্ট কারেন্ট।
    পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎশক্তির ব্যয় অনেক বেশি। সে কারণেই এ পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয়। নতুন আবিষ্কৃত প্লাজমা এ সমস্যা সমাধানের এক নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। এক্ষেত্রেও প্রাথমিক উপাদান জল, তবে তা থাকে বাষ্পীয় অবস্থায়। প্রথমে প্লাজমা রিঅ্যাকটর চেম্বারে অল্প চাপে জলীয় বাষ্প ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
    চেম্বারের মধ্যে উচ্চকম্পাঙ্কের তড়িৎমোক্ষণ হতে থাকে। এর ফলে জলের অনু ইলেকট্রন ত্যাগ করে মূলক আয়নে পরিণত হয়। তারপর ‘ইলেকট্রিক ফিল্ড অ্যাক্সিলারেটর’ যন্ত্রের সাহায্যে আয়নগুলির মধ্যে সংঘাত ঘটানোর হয়, ফলে তা থেকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাস বেড়িয়ে আসে।
    প্লাজমা রাসায়নিক পদ্ধতি আবিষ্কারের পেছনে বহু বিজ্ঞানীর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অবদান থাকলেও ; আবিষ্কারের অন্যতম দাবিদার হলেন-সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার অধ্যাপক আর অ্যাজিজ্যাভ এবং ভি জিহিভোটোভ।
    সাধারণভাবে ছোট আকারের প্লাজমা-রাসায়নিক রিঅ্যাকটর থেকে ঘন্টায় প্রায় ১০ ঘন মিটার গ্যাস পাওয়া যায়, যা তড়িৎবিশ্লেষণ পদ্ধতির সবচেয়ে আধুনিক যন্ত্রের উৎপাদন ক্ষমতার ১০ হাজার গুন বেশি। প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমাণ প্রতি অণুগ্যাসের জন্য মাত্র ৭ ইলেকট্রন ভোল্ট। প্লাজমা-রাসায়নিক পদ্ধতির আরো একটি লাভজনক দিক হলো; বিভিন্ন প্রকারের ধাতু আকরিক একই সঙ্গে পরিশোধন করা যায়।
    জলের সঙ্গে কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই- অক্সাইডকেও উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রথমে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে কার্বন মনোক্সাইড ও অক্সিজেনে ভেঙ্গে দেওয়া হয়, পরবর্তী বিক্রিয়ায় কার্বন মনোক্সাইড জলের অণু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
    শুধুমাত্র ঘরোয়া জ্বালানীতেই নয়, বিশুদ্ধ ধাতু উৎপাদন, ধাতুর পাত কাটা, ওয়েল্ডিং প্রভৃতি কাজেও হাইড্রোজেন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে সে কারণেই প্লাজমা-রাসায়নিক পদ্ধতি বিকল্প শক্তির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।       

Join our mailing list Never miss an update