জলে অ্যালার্জি, ঘামেও; ৮ মার্চ ২০০৮; পৃষ্ঠা- তিন; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
এই মেয়ে স্নানই করতে পারে না। কারণ জলে ভিজলেই অ্যালার্জি হয় তার। সে গরম জল হোক কিংবা ঠান্ডা, যে তাপমাত্রারই জল হোক না কেন। তাই সাঁতার কাটাও বারণ। এমনকি ঘামতেও পারে না,কেননা ঘাম হলেও অ্যালার্জি বেরোয়। ঘাম হয় এমন কারও পাশে শুলেও অ্যালার্জি হয়। জলে বা ঘামে ভিজলেই সর্বাঙ্গের ত্বকে লাল লাল অ্যালার্জি-ছোপ ফুটে উঠবে। শুধু ফুলেই উঠবে না, চুলকাবে। দু-ঘন্টা লাগবে সেগুলি দূর হতে। ত্বকের ব্যতিক্রমী এই ভোগান্তির নাম : অ্যাকুয়াজেনিক আরটিকারিয়া। পাঁচ বছর ধরে এই ভোগান্তি চলছে তার। এই মেয়ের নাম : অ্যাশলি মরিস। বাড়ি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। তোয়ালে ভিজিয়ে হাত, পা, মুখ, মাথা পরিষ্কার করে সে। এক মিনিটে যতটুকু স্নান সম্ভব সেটুকু করতে পারে। কিন্তু তার বেশি জল লাগালেই অ্যালার্জি বেরিয়ে যাবে। চুলকাবে ব্যাপক জ্বলুনি সইতে হবে। একটি অফিসে চাকরি করার পাশাপাশি সাংবাদিকতা এবং জনসংযোগ বিষয় নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে অ্যাশলি। চিকিৎসকরা তাকে বলেছেন, এরকম কেস আগে কখনও পাইনি। হ্যাঁ, অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না জলের প্রতিও কারও এই ধরনের অতিস্পর্শকাতরতা হতে পারে। যখন ১৪ বছর বয়স, তখন গুরুতর টনসিলাইটিস-এর শুশ্রূষা হয়েছিল অ্যাশলির। প্রচুর পেনিসিলিন দেওয়া হয়েছিল তাকে। তাতে টনসিলাইটিস দূর হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু অ্যালার্জির এই ভোগান্তি শুরু হয়ে যায়।
অ্যাশলিকে যিনি চিকিৎসা করছেন, সেই ত্বক-বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবু প্রফেসর রডনি সিনক্লেয়ার জানিয়েছেন, পেনসিলিন অতিমাত্রায় ব্যবহারের কারণে অ্যাশলির শরীরে হিস্টামিন-এর মাত্রায় হেরফের ঘটে গেছে। যার জেরেই অ্যাশলিকে অ্যাকুয়াজেনিক আরটিকারিয়ায় ভুগতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, শরীরের কোষকলায় থাকা এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান হল হিস্টামিন, যার তারতম্য ঘটলে এরকম অ্যালার্জি হয়। অ্যাশলির এই ভোগান্তি পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়, কেননা এই ভোগান্তি সম্পর্কে সেরকম তথ্যই নেই কোথাও। ঘাম এড়াতে সবসময় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকতে হয় সে অফিসেই হোক কিংবা বাড়িতে। পথে বেরোতে হলে গাড়িতে সবসময় ছাতা রাখতে হয়। কোন খেলাধূলা বারণ, কেননা খেললেই ঘাম হবে। অ্যাশলি জানে এভাবে বেঁচে থাকা যাবে, কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে এক বিছানায় কী করে কাটাবে? কারণ স্বামী-স্ত্রী দুজনের ঘামই তাদের শরীরী সখ্যতায় প্রতিবন্ধক হবে।