কুঁচো চিংড়ি খান, ক্যানসার ঠেকান

কুঁচো চিংড়ি খান, ক্যানসার ঠেকান

কুঁচো চিংড়ি খান, ক্যানসার ঠেকান; -ডাঃ পার্থপ্রতিম;  ২৯ জুলাই ২০০৬; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত
ছোটো ছোটো চিংড়ি খান। চিংড়িতে থাকা সেলোনিয়াম ক্যানসার হওয়া আটকাবে। যাঁদের ক্যানসার হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও চিংড়িতে থাকা এই সেলোনিয়াম জরুরি, কারণ এই সেলোনিয়াম ক্ষতিগ্রস্ত কোষের মেরামতি করে, ক্যানসারগ্রস্ত কোষেদের মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দেয়। মানে সেলেনিয়ামের তৎপরতায় কোষগুলি নিজে নিজেই মরে যায়। সিলেনিয়ামে থাকা গ্লুটাথিওন পারঅক্সিডেজ নামের মহাশক্তিধর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এনজাইম তথা উৎসেচকটিই ক্যানসার রোধে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। গ্লুটাথিওন পারঅক্সিডেজের পরিমাণ যখন কমে আসে, তখন শরীরের মধ্যে মস্তানি শুরু করে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল তথা দেহ বিছিন্ন বিষ অণুগুলি। এগুলোকে শায়েস্তা না করা গেলে এরা নানা ধরনের ক্ষতি তো করেই, পাশাপাশি ক্যানসার কোষের সংখ্যা বাড়িয়ে যেতেও সাহায্যে করে। দিনে যতটুকু সেলেনিয়াম একজন প্রাপ্তবয়স্কের দরকার, তার ৬৪ শতাংশ মেলে ১১৩ গ্রাম কুচো চিংড়ি খেলেই। ক্যানসার এপিডেমিওলজি বায়োমেকারস-এর ২০০৪ সালের এপ্রিল সংখ্যায় রয়েছে : লিউকেমিয়া, মালটিপল মাইলোমা এবং নন হজাকনস লিমফোমা-র মতো ক্যানসার আটকানো বা ওই সব ক্যানসার হলে তার বাড়াবাড়ি রোধ করতে পারে কুচো চিংড়ি।

    ছোটো চিংড়ির মধ্যে থাকা ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল সম্পর্কে মানুষের মনে বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ কেউ এই চিংড়ি খান না কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে বলে। তাঁদের অবগতির জন্য জানাই, একবার পরীক্ষা করা হল, দেখা গেল ৩০০ গ্রাম করে কুচো চিংড়ি যাঁদের খাওয়ানো হয়েছিল, তাঁদের বাজে কোলেস্টেরল বেড়েছে ৭ শতাংশ ভালো কোলেস্টেরল বেড়েছে ১২ শতাংশ হারে। রক্তে দুষ্ট চর্বি তথা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়েছে ১৩ শতাংশ হারে। রক্তের মধ্যে থাকা খুনি হোমোসিস্টিনের মাত্রাও কমায় এই চিংড়ি। রক্ত সংবহনকারী নলিগুলোর প্রাচীরের ক্ষতি করার একটা তৎপরতা চালায় হোমোসিস্টিন নামের অ্যামাইনো অ্যাসিড। সেই অ্যামাইনো অ্যাসিডের মাত্রাধিক্য ঠেকাতে চিংড়ির মধ্যে থাকা ভিটামিন বি টুয়েলভ ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উল্লেখ্য, রক্তে হোমোসিস্টিনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক তথা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ভারতে বেড়েই চলেছে। ফোলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি টুয়েলভ-এর ঘাটতির জেরেই রক্তের মধ্যে হোমোসিস্টেনের পরিমাণ বেড়ে যায়। চিংড়ির মধ্যে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগে বা ব্রেন স্টোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়, যেভাবে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া হৃদরোগের আক্রমণ হয়, সেইভাবে জমাট বাঁধতে দেয় না। প্রতিদিন এই ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা যতটুকু তার ১৫ শতাংশ মেলে ১১৩ গ্রাম কুচো চিংড়ি থেকে। ৪ আউন্স তথা ১১৩ গ্রাম ছোটো চিংড়িতে সেলিনিয়াম থাকে ৪৪.৯১ মাইক্রোগ্রাম। দিনে যতটা ভিটামিন ডি দরকার তার ৪০.৬ শতাংশ মেলে এই চিংড়িতে। আয়রন মেলে ৩.৫ গ্রাম। কোবালামিন নামের ভিটামিন বি টুয়েলভ মেলে দিনে যতটা প্রয়োজন তার ২৮.২ শতাংশ। ম্যাগনেসিয়াম মেলে ৩৮.৫৬ মিলিগ্রাম। জিংক, কপার মেলে যথাক্রমে ১.৭৭, ০.২২ মিলিগ্রাম। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড প্রতিদিনের জন্য যতটা দরকার, মেলে তার ১৪.৮ শতাংশ। ফসফরাস মেলে প্রতিদিনের চাহিদা ১৫.৫ শতাংশ তথা ১৫৫.৩৬ মিলিগ্রাম। ভিটামিন বি থ্রি তথা নিয়াসিন মেলে ২.৯৪ মিলিগ্রাম। দৈনিক চাহিদার ১৪.৭ শতাংশ। মেলে ট্রিপটোফ্যান ০.৩৩ মিলিগ্রাম, দৈনিক চাহিদার ১০৩ শতাংশ। বিভিন্ন দেশে তিনশোরও বেশি প্রজাতির হাজারো রকমের চিংড়ি মেলে। চিংড়ি খেলে অ্যালার্জি হয় যাঁদের, তাঁরা চিংড়ি খাবেন না। বাতের রোগীরাও না। ইউরিক অ্যাসিড যাঁদের কাছে সমস্যা, তাঁরাও খাবেন না। কারণ, চিংড়ির মধ্যে থাকা পিউরিন ভেঙে ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হলেই বিপত্তি। খোলসের সঙ্গে আঁটো হয়ে লেগে থাকা চিংড়িই কিনবেন, লতলতে চিংড়ি নয়।   

      

Join our mailing list Never miss an update