মেনোপজ ও খাবার- দাবার

মেনোপজ ও খাবার- দাবার

মেনোপজ ও খাবার- দাবার; ডাঃ পার্থপ্রতিম। ১৩ই আগষ্ট ২০০৬; উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত

জীবনটাই হল একটা সঙ্গীত। এতে আভোগ আছে, স্থায়ী আছে। আছে অন্তরা- সঞ্চারী। প্রকৃতির বুকে খেলে যাওয়া গ্রীষ্ম - বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তের মতো আমাদের জীবন অঙ্গনে হতে থাকে ঋতু পরিবর্তন। কৈশোর থেকে আমরা যখন যৌবনে পা রাখি তখন আমাদের শরীরে  বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন আসে। দ্রুত পাল্টাতে থাকে দেহের  ভূগোল। কিশোরের চেয়ে কিশোরীর এই আভ্যান্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবর্তন বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। দশ বছরের কিশোরীর সাথে চতুর্দশবর্ষীয়ার যেন কোনও মিলই নেই। শুধু দেহের গঠনে নয়; চিন্তা- মননে সে হয়ে উঠেছে এক নারী। ডিম্বাশয় বা ওভারীতে তৈরী হওয়া ইস্ট্রোজেন হরমোন চোখের আড়ালে দাঁড়িয়ে এইসব পরিবর্তন ঘটাতে থাকে।     

    যুবতী মেয়ের ডিম্বাশয় বা ওভারিতে থাকে ছোট ছোট থলির মতো ফলিকল। ফলিকলগুলির ভেতরে থাকে ওভাম বা ডিম্বাণু। এই ডিম্বাণুগুলি ক্রমশ বড় হতে হতে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়, তারপর ফলিকস ফেটে বেরিয়ে আসে। ডাক্তারী ভাষায় একে বলা হয় অভিউলেশন। বাংলা তর্জমায় কবে ডিম্বাণু নিষ্ক্রমণ বলা যায়। এর ফলেই চলতে থাকে মেয়েদের মাসিক ঋতুচক্র বা পিরিয়ড । মোটামুটিভাবে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যেই এ প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। ভারত - পাকিস্থান- বাংলাদেশের মতো  গ্রীষ্ম প্রধান দেশে মেয়েদের প্রথম পিরিয়ড শুরু হয় ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সে। প্রতি ২৮ দিন পরপর চলে অভিউলেশন ও ঋতুচক্র। এই ঘটনা চলতে থাকে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত। তারপর স্বাভাবিক কারণেই ওভারী তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে; থেমে যায় পিরিয়ড। বাংলায় যাকে বলি রজোনিবৃত্তি; ইংরাজিতে মেনোপজ।      
    মেনোপজের লক্ষণ এক- এক মহিলার মধ্যে এক এক ভাবে ফুটে ওঠে। । রজোনিবৃত্তির সময় কারো কান-মাথা-গলা ঝাঁঝা করে, গরম হল্কা বা হট ফ্লাশ দেখা দেয়। সঙ্গে থাকে প্রচুর ঘাম। এই অসুবিধা দিনের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ বারও হতে পারে। এসময় প্রস্রাবের সমস্যা খুবই সাধারণ। বারবার প্রস্রাবের বেগ আসতে থাকে কিন্তু ঠিক মতো হয় না। এই সময়ে দৈহিক মিলনেও অনিচ্ছা আসতে দেখা যায়। যোনীর আবরণে থাকা ত্বকের স্তর পাতলা হয়ে পরে, সঠিকভাবে পিচ্ছিল হয় না যোনীপথ। সে কারণে অনেক মহিলাই শারীরি সখ্যতায় ব্যাথা বোধ করেন। মিলন ভীতিও দেখা যায় কারো কারো মধ্যে। শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব থেকেই দেখা দেয় এই অসুবিধা। মেনোপজের সময় থেকেই নারীঅঙ্গে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে থাকে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার জন্য বড় বড় হাড় গুলি অল্প আঘাতে ভেঙ্গে যায়।  দেখা দিতে পারে অস্টিওপোরোসিসের মতো ব্যাধি। স্বাভাবিকভাবে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা মহিলাদের তুলনায় পুরুষের মধ্যে দ্বিগুন। তবে মেনোপজের পর এই সম্ভবনা সমান সমান হয়ে যায়। নারী অঙ্গের ইস্ট্রোজেন হরমোন যতক্ষণ কার্যকর থাকে ততদিন তা কোলেস্টেরল নামের চর্বিকে রক্তে ধরে রাখে। শিরা-ধমনীর দেওয়ালে জমতে দেয় না। কিন্তু রজোনিবৃত্তির পর শিরা-ধমনী সরু হয়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।      
    মেনোপজের সময় ও পরবর্তী পর্যায়ে খাদ্য-খাবার এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক মহিলা এসময় খুব মোটা হয়ে পড়েন; কেউ বা আবার হঠাৎ খুব শুকিয়ে যান। যিনি হঠাৎই রোগা হয়ে যাচ্ছেন তার রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে ডায়াবিটিস বা অন্য কোন অসুখ হল কী না। এসময় যাদের ওজন বাড়ছে তাদের প্রথম থেকেই সতর্ক হতে হবে। খাবার তালিকা থেকে মাখন, ঘি, আলু, মিষ্টি যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলুন। যারা বাড়িতে থাকেন গৃহবধূ তাদের দৈনিক ১৫০০ থেকে ১৭০০ ক্যালরি খাবার হলেই হবে। তবে আপনি যদি কর্মরতা হন, বাসে-রাস্তায় চলাফেরা করেন তারা দৈনিক ১৭০০ থেকে ২০০০ ক্যালরি পরিমাণ খাদ্য খাবেন।   

    ক্যালরির হিসেব নিকেশে যাদের রপ্ত হয়নি  তারা মোটামুটিভাবে এই তালিকা মেনে খেতে পারেন-   
   
    সকালে ঘুম থেকে উঠে এককাপ লিকার চা; সাথে এক মুঠো মুড়ি বা ক্রিম ক্যাকার বিস্কুট।
    সকাল ৯টা নাগাদ- মুড়ি, চিড়া, দুটি হাত রুটি, দুটি  দু‌ পিস পাউরুটি এর সবের যে কোন একটা। সঙ্গে আলু ছাড়া অন্য সবজির তরকারি। এছাড়া ভালো লাগলে অল্প খই, একটু দুধ কলা দিয়ে মেখে প্রাতরাশ সারতে পারেন।
    দুপুর ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে- ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম সিদ্ধ চালের ভাত সঙ্গে ডাল, তরকারি, ছোট মাছের ঝোল। ঘরে পাতা টক দই, স্যালাড খাবেন।
    বিকাল সাড়ে চারটা থেকে ৫টার মধ্যে- চিনি ছাড়া লিকার চা বা কফি, সঙ্গে বিস্কুট বা মুড়ি।    
    রাত সাড়ে ন’টা থেকে ১০টার মধ্যে রাতের খাবার খাবেন। ২৫ গ্রাম আটার রুটি, ডাল, তরকারি, মাছ বা মুরগীর মাংস খেতে পারেন।       
  

Join our mailing list Never miss an update